মোঃ আরাফাত সানী::মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
রোববার (১৬ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে গণশুনানী শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
সিনহা হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে উল্লেখ করে মিজানুর রহমান আরও বলেন, তদন্তের স্বার্থে আজ (রোববার) গণশুনানী করেছি। এতে ১১জন স্বাক্ষ্য দিতে নাম নিবন্ধন করলেও আমরা ৯জনের কাছ থেকে স্বাক্ষ্য নিয়েছি। অন্য দু’জনের কথায় তাদের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে মনে হয়নি। মিজানুর রহমান বলেন, সিনহা হত্যার পর ৩ আগস্ট আমারা তদন্তের দায়িত্ব পাই। আমাদের সময় বেঁধে দেয়া হয় সাত কর্মদিবস। মেন্ডেট দেয়া হয়েছিল এ ঘটনার উৎস, কারণ বের করা এবং এ ধরনের ঘনটা ভবিষ্যৎ যাতে আর না ঘটে এ জন্য কি করনীয় ঠিক করে শুপারিশ করা।
তিনি বলেন, আমারা কাজ শুরু করার পর যেখানে যেখানে যাওয়া দরকার প্রত্যেকটা জায়গায় গিয়েছি। মানচিত্র তৈরি করেছি। ঘটনা যেখানে থেকে সূত্রপাত সে মারিশবনিয়া পাহাড় থেকে হত্যার ঘটনাস্থল তিনবার পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট যারাই ছিল, টেকনাফ থানার পুলিশ, তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, আর্ম ব্যাটালিয়ন পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত যানবাহন ও সেইসব গাড়ির চালক, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার, সুরতাল তৈরিকারী পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোটামুটি প্রায় ৬০জনের মত ব্যক্তিবর্গকে জিঙ্গাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়ে তাদের কাছে থাকা ডকুমেন্ট পত্র যোগাড় করেছি এবং তা পর্যালোচনা করেছি।
মিজানুর রহমান আরো বলেন, আজকে আমারা প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের বক্তব্য নিতে ঘটনাস্থলের পাশে সরকারি স্থাপনা বেছে নিয়ে সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যদিয়ে আমাদের তদন্ত কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমাদের ২৩আগস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া আছে। আশা করছি সে সময়ের মধ্যে আমারা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
গত ১২ আগস্ট তদন্ত কমিটির সদস্য কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাহজাহান আলি একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এতে তিনি বলেন, ৩১ জুলাই আনুমানিক রাত ১০টার দিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে জন্য গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে ১৬ আগস্ট। সেই ঘোষণা মতে, রোববার (১৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে তদন্ত কমিটি গণশুনানি ও আয়োজন করে। উক্ত শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে ১১ জনের নাম নিবন্ধন করা হয়। নিবন্ধনকৃত এসব সাক্ষীদের কাছ থেকে ৯জনের সাক্ষ্য নেয় তদন্ত কমিটি।
গণশুনানীতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. মিজানুর রহমান ছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জাকির হোসেন, কক্সবাজারের এডিএম মোহা. শাজাহান আলী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাজ্জাদ এবং সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ৯টা হতে গণশুনানী স্থলে আসা শুরু করেন সবাই। বক্তব্য দিতে আগ্রহীরা নাম রেজিস্ট্রেশন বুথে যান। গণশুনানী উপলক্ষে মেরনি ড্রাইভের শাপলাপুর এলাকা, ক্যাম্পস্থল এবং আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা বলয় তৈরী করেছে সেনাবাহিনী ও অন্য শৃংখলাবাহিনী। বিপুল পরিমাণ গণমাধ্যমকর্মীও আসেন ঘটনাস্থলে। আশপাশে তাদের যাতায়ত অবাধ থাকলেও শুনানী কক্ষে গণমাধ্যমের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বৃষ্টি উপক্ষো করে হাজারো লোকজন শুনানীস্থল এবং আশপাশে ভীড় জমান।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের মতে, সিনহা হত্যাকান্ডে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করছেন তারা। এর মাঝে এ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত, নাকি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে। কার নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেছিলেন লিয়াকত। ঘটনার সময় আদৌ সিনহার হাতে অস্ত্র ছিল কি না, এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণণায় এসব প্রশ্নের জবাব মিলছে কিনা তা খতিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সূত্রে মতে, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে ফোন করে বলেছিলেন, তিনি সিনহাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গুলি করার আগে লিয়াকত ওসি না অন্য কারও কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন, সে ব্যাপারে আরও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে তদন্তকারী দল।
সিনহার সঙ্গী সাহেদুল ইসলাম সিফাত পুলিশকে বলেছিলেন, গাড়ি থেকে নামার সময় সিনহার অস্ত্র হাতে ছিল কি না, তা তিনি দেখেননি। কিন্তু পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গাড়ি থেকে নেমে কোমরের ডান পাশ থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হন সিনহা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হবে। এদিকে, সিনহা হত্যাকান্ডের ১৪ দিনের মাথায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে শুক্রবার। জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এর আগে মামলাটি তদন্ত করছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার জামিলুল হক। তদন্তভার পেয়েই-সিনহা হত্যা মামলার আসামি চার পুলিশসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে র্যাবের একটি গাড়ি কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে সাত আসামি কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া এবং পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. আইয়াস, নুরুল আমিন ও নাজিম উদ্দিনকে নিয়ে যান। গত বুধবার কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এই সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন (অব.) সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহতের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে গত ৫ আগস্ট টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরির্দশক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আর মামলাটির তদন্তভার দেয়া হয়েছে র্যাবকে। ইতিমধ্যে মামলার নতুন আইও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসামীদের রিমান্ডেও নিয়েছেন।###
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com