নিজস্ব প্রতিবেদক:: টেকনাফ
টেকনাফের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোত) এর সহ-সভাপতি ঝুন্টু বড়ুয়ার সহায়তায় মানসিক ভারসাম্যহীন রত্না রাণী রায় ফিরে পেল তার পরিবারকে ।
দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর। রত্না রানী ফিরে না, রত্না রানী মারা গেছেন, এমনটাই ধরে নিয়েছিলো পরিবার। তবে পরিবার নিয়ে রত্না রাণীর কোন ভাবনা নেই। রত্না রানী মানসিক ভারসাম্যহীন। নইলে কি আর সেই এইভাবে বাজারে, ঘাটে, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত।
এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে চলে আসেন নয়াপাড়া এলাকার পল্লী চিকিৎসক ঝুন্টু বড়ুয়ার চেম্বারের সামনে। তিনি তাহাকে নিজ হেফাজতে রেখে ভালবাসা দিয়ে কথা বলা শুরু করে। কথাবলার এক পর্যায়ে সে কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালি থানার পাঁচথুবী ইউনিয়নের পন্ড নগর গ্রামের রত্না রানী রায় বলে জানায়।
এর পরই শুরু হয় ঝুন্টু বড়ুয়া ও মোহাম্মদ হোসাইন আমিরীর প্রচেষ্টা। তাহারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে ভিডিও দেওয়ার পাশাপাশি কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ওসি মহোদয়ের সাথে কথা বলে পাঁচথুবী ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রত্না রাণীর ভাই এবং ভাইপো সবুজের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।
তাকে ফিরে পেয়ে সন্তান থেকে শুরু করে পরিবারের সবাই খুব খুশী। এরপর ফেইসবুকের মাধ্যমে ভিডিওতে রত্নাকে কাছ থেকে দেখে সবার চোখ ছলছল করে উঠে। যখন রত্না রাণীর ভাইপো সবুজের মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয় তখন তো অনেকেই বাকরুদ্ধ। তারপর কুমিল্লা থেকে পরিবারের সদস্যরা আজ ০৪ আগস্ট টেকনাফ থানাধীন সাবরাং নয়াপাড়ায় আসলে মা-ছেলের সাক্ষাতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তাদের হাতে রত্না রাণীকে হস্তান্তর করা হয়।
হস্তান্তর কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোত)'র প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল, উপদেষ্টা সাইফুল হাকিম, সংগঠনের সহ-সভাপতি ঝুন্টু বড়ুয়া, সাবরাং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির, মারোতের সাধারণ সম্পাদক রাজু পাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইন, আইসিটি বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন আমিরী, সদস্য কামাল হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন ও অনিমেষ বড়ুয়া প্রমুখ।
এ সময় মারোতের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল জানান, ২০১৭ সালের ১ লা জানুয়ারি অবহেলিত ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের কথা চিন্তা করে মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোত) নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় । আমাদের একটাই উদ্দেশ্য তা হল সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠী ভবঘুরে পাগলদের সেবা করা। সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও হস্তান্তর (পূনর্বাসন) এই চারটি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে ভবিষ্যতে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে বাসস্থানেরও ব্যবস্থা করতে পারব বলে আশা করছি।
সংগঠনের সভাপতি আবু সুফিয়ান এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আমাদের সহ-সভাপতি যেভাবে মানসিক রোগীদের নিয়ে শত ব্যস্ততার মাঝেও কাজ করে যাচ্ছেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তিনি আরও জানান , মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোতে)'র পক্ষ থেকে বাবু ঝুন্টু বড়ুয়ার সহায়তায় এর আগে ও ২৬ জন মানসিক রোগীদেরকে নিজ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রত্না রাণী আমাদের ২৭ তম হস্তান্তর।
এই প্রসঙ্গে সহ-সভাপতি ঝুন্টু বড়ুয়া বলেন, আমি এবং মোহাম্মদ হোসাইন আমিরী উভয়ে সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই ২০১৬ সাল থেকে মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করছি। সে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল থানা কুলসুম বেগমকে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে।
রত্না রানীর ছেলে রিংকু রায় জানান, মা বেঁচে আছে আমরা সেটা চিন্তাও করতে পারিনি। প্রায় ১২ বছর আগে নানার সাথে সিলেটে কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে গিয়ে হারিয়ে যায়। সেই থেকে আর কোন হদিস পাই নাই। হারিয়ে যাওয়া মাকে নানার সাথে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও খুঁজেছি। মায়ের শোকে কাতর হয়ে ৭ মাস আগে নানাও মারা যায়।
সে আরও জানান, গত ০১ আগস্ট স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঝুন্টু বড়ুয়ার সাথে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে আমরা ছবি ও ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর মাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টেকনাফ এসেছি। মা এখন খুব বেশি কথা বলছে না। তবে মনে হয় সবাইকে আস্তে আস্তে চিনতে পারবে। মানসিক কিছু সমস্যা আছে এই কারণে বাড়িতে গিয়ে ডাক্তার দেখাবো বলে আমরা চিন্তা করছি।
রত্না রানীর মেয়ের জামাই লিটন শেখ বলেন, আমার শাশুড়িকে পেয়ে খুব আনন্দ লাগছে। কারণ বিয়ের পর থেকে কখনো আমি শাশুড়িকে দেখিনি। আমরা ভাবিনি এত বছর পর শাশুড়ি-মাকে ফিরে পাবো। টেকনাফের সেবামূলক সংগঠন মানসিক রোগীদের তহবিল (মারোত)'র সহ-সভাপতি ঝুন্টু বড়ুয়া ও আইসিটি সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন আমিরীর কারণেই আমরা তাকে খুঁজে পেলাম। আর এইখানে এসে মারোতের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। তাই সকল সদস্যদেরকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ।
হস্তান্তর শেষে মারোতের পক্ষ থেকে বিসমিল্লাহ ভাতঘরের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ হারুন এর উদ্যোগে মানসিক রোগীদের মাঝে ১২০তম দিবসের খাবার বিতরণ করা হয়।
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com