আজিম নিহাদ:
কক্সবাজার শহর ও জেলাজুড়ে সড়কে টোকেনের মাধ্যমে পরিবহনে চলছে রমরমা চাঁদাবাজি। নামে-বেনামে শ্রমিক সংগঠন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা সহ বিশাল একটি চক্র চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। প্রতিমাসে নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা নিয়ে টোকেনের মাধ্যমে অবৈধ গাড়িগুলো সড়কে চলাচলের অনুমোদন দেয় খোদ ট্রাফিক পুলিশ।
সড়কে চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয় থাকায় পরিবহনে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। টোকেনের মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করে অবৈধগাড়ি গুলোও সড়কে বৈধ গাড়ির ন্যায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসলেও ‘টোকেনের’ নামে চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
তবে নতুন পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান অতীতের পথে হাঁটতে চান না। তিনি সড়কে টোকেনের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বেশ তৎপর। পরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে বেশকিছু পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন। বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চান তিনি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশকিছু অবৈধ সিএনজি (অটোরিক্সা) ও মাহিদ্রা জব্দ করা হয়। ওই অভিযানে পুলিশ সুপার নিজে নেতৃত্ব দেন। এরপর সড়কে চাঁদাবাজি করার সময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সড়ক থেকে চাঁদাবাজি নির্মুলে কঠোরভাবে মাঠে নেমেছেন তিনি। যেকোনভাবে সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
মো. হাসানুজ্জামান পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজার যোগদান করেছেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর। যোগদানের ১০ দিনের মাথায় তিনি করোনা আক্রান্ত হন। কিছুদিন আগে করোনামুক্ত হয়ে যানজট নিরসন ও পরিবহনের নৈরাজ্য দূর করতে মাঠে নামেন। অভিযানের পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে সতর্ক করতে পরিবহন মালিক-চালকদের সাথে সচেতনতামূলক সভাও করছেন।
রোববার (১ নভেম্বর) বেলা ১১ টায় কক্সবাজার পুলিশ লাইন্স মিলনায়তনে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি অটোরিক্সা (থ্রি হুইলার) মালিক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের জন্য ‘গনসচেতনতা সভা’ আয়োজন করে জেলা পুলিশ।
সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার বলেন, সড়কে টোকেনের মাধ্যমে কোন ধরণের টাকা নিতে-দিতে দেওয়া হবে না। সড়কে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত যত বড় মাস্তানই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন চাঁদাবাজকে আটকও করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অতীতে কিভাবে চলেছে, কারা করেছে সেটা দেখবো না। চাঁদাবাজির সব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হবে। শহরে ঢুকতে বা বের হতে কাউকে টাকা দিতে হবে না, নিতেও দেব না। চাঁদাবাজি করার জন্য কেউ রাস্তায় দাঁড়ালে পরিণতি ভাল হবে না।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় প্রায় ৮ হাজার সিএনজি (অটোরিক্স) আছে। এরমধ্যে ২ হাজারের অধিক নিবন্ধন নেই। কক্সবাজারে সিএনজির নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রতিদিন নতুন নতুন সিএনজি মাঠে নামছে। ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ‘মাসিক টোকেন’ নিয়ে এসব অবৈধ সিএনজি সড়কে চলাচল করে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশ এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনে মাসিক চাঁদা দিতে হয় সিএনজি মালিকদের।
প্রায় ১৬০০ ডাম্পার সড়কে চলাচল করলেও নিবন্ধন আছে মাত্র ১৬ থেকে ২০টির। এসব অবৈধ ডাম্পার পাহাড় কাটাসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজে ব্যবহার করা হয়। এসব ডাম্পারও একইভাবে ‘টোকেন’ নিয়ে চলাচল করে। সড়কে চলাচল করে শত শত অবৈধ মাহিদ্রা-পিয়াজি।
কক্সবাজার শহরে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ব্যাটারি চালিত টমটম (অটোরিক্সা) চলাচল করে। এর সংখ্যা ৮ হাজারের কম নয়। নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও কক্সবাজার পৌরসভা বছর বছর নিবন্ধনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এসব টমটম অবৈধ। বেশ কয়েকবার অবৈধ টমটম উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হলেও কখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
সভায় পুলিশ সুপার বলেন, যেসব গাড়ির নিবন্ধন নেই সেগুলো সড়কে নামতে পারবে না। নামতে হলে নিবন্ধন করেই নামতে হবে। একইভাবে যাদের ড্রাইভিং লাইন্সেস নেই তারা গাড়ি চালাতে পারবে না। অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের গাড়ি দেওয়া যাবে না। নিবন্ধনবিহীন গাড়ি এবং চালক দুটোই সড়কের জন্য বিপজ্জনক। কোন দুর্ঘটনা বা অপরাধ করলে দ্রুত সনাক্ত করা সম্ভব হয়না।
ট্রাফিক পুলিশের বিষয়ে তিনি বলেন, এখন থেকে ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা ক্যাশ পরিশোধ করা যাবে না। সব ধরণের জরিমানার অর্থ মেশিনের মাধ্যমে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হবে। নগদ লেনদেনের কোন সিস্টেম থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, অতীতে কি ছিল সেটা এখন দেখার বিষয় নয়। কোন ধরণের টোকেন বাণিজ্য চলবে না। ট্রাফিক পুলিশের কোন সদস্য যদি চাঁদা বা অনৈতিক সুবিধা দাবী করে তাহলে আমাকে জানাবেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চালক ও মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অমুক সিন্ডিকেট তমুক সিন্ডিকেটে জড়াবেন না। কোন সিন্ডিকেটে চাঁদা দেওয়ার দরকার নেই। আপনি যত বড়ই হোন পরিবহন থেকে অনৈতিকভাবে চাঁদা আদায় করে রেহায় পাবেন না।
আমি প্রাথমিকভাবে সতর্ক করছি এবং সুযোগ দিচ্ছি সংশোধন হওয়ার। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশোধন না হলে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে জানান নবাগত পুলিশ সুপার।
সভায় সিএনজি মালিক রাশেদ আনোয়ার বলেন, ড্রাইভারের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করলে ২৬০০ টাকা স্থলে ১১ হাজার টাকা দাবী করে। একইভাবে সিএনজি নিবন্ধনের (বর্তমানে বন্ধ রয়েছে) জন্য ১৫ হাজার টাকার স্থলে ৩৩ হাজার টাকা দাবী করে বিআরটিএ কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। বিআরটিএ কার্যালয়ের এসব অনিয়ম নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।
পুলিশ সুপার বলেন, নির্ধারিত ফি’র বাইরে এক টাকাও বেশি দেবেন না। আমি বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের সাথে কথা বলবো। নির্ধারিত ফি’র বাইরে এক পয়সাও বেশি দিতে হবে না।
কক্সবাজার শহরজুড়ে সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকে দূরপাল্লার বাস সহ সব ধরণের গণপরিবহন। একারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক পুলিশ কার্যকর কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় সড়কে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে গাড়িগুলো।
এবিষয়ে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, বাস এবং বড় গাড়িগুলো মানুষকে মানুষ মনে করে না। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করে। আমি যতদিন থাকবো এই অবস্থা চলতে দেবনা।
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com