শহিদুল ইসলাম,ঢাকা থেকে
পুলিশের রোষানলে পড়ে তাদের নৃশংসতায় আজ অন্ধপ্রায় কক্সবাজার ও ময়মনসিংহের দুইজন সাংবাদিক। কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা মানেই ছিল ক্রসফায়ার অথবা অকথ্য নির্যাতন। অপরদিকে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের সাবেক উপ পরিদর্শক (এসআই) আক্রাম হোসেনের কর্মকান্ডও ছিল প্রদীপের মতই ভয়ঙ্কর। সাধারণ মানুষের মত এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার কবল থেকে রক্ষা পাননি দুইজন সাংবাদিক। এদের একজন হলেন, কক্সবাজারের ফরিদুল মোস্তফা খান এবং ময়মনসিংহের সিনিয়র সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক।
টেকনাফের ওসি প্রদীপ দাশের মাদক সংশ্লিষ্টতা, মাদক ব্যবসা, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, ক্রসফায়ার এসব অপরাধমূলক সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক কক্সবাজারবাণী ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনতারবাণী ডটকম এর সম্পাদক ও প্রকাশক ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ৬টি মিথ্যা মামলা। এসব মামলায় তাকে থাকতে হয় দীর্ঘ ১১ মাস ৪ দিন কারাগারে। এরআগে চালানো হয় তার উপর অকথ্য নির্যাতন।
অপরদিকে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের এসআই আক্রাম হোসেনের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতা, মাদক ব্যবসা, গ্রেপ্তার বাণিজ্য এসব অপরাধমূলক সংবাদ প্রকাশের জের ধরে দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক খায়রুল আলম রফিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৩টি মামলায় পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘ দুই মাস থাকতে হয় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে। এরআগে তার চোখ বেঁধে অকথ্য নির্যাতন করে এসআই আক্রাম হোসেন।
জানা যায়, প্রদীপের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় ২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুর এলাকার (১ নম্বর সেকশনের শাহ আলীবাগের প্রতীক হাসনাহেনা) ভাড়া বাসা থেকে ফরিদুল মোস্তফাকে ধরে টেকনাফ থানায় নিয়ে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় প্রদীপ কুমার। সে সময় তার চোখে মরিচের গুঁড়া দিয়ে নির্যাতন করায় বর্তমানে দু’টি চোখই নষ্ট হওয়ার উপক্রম। তার হাত-পা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ফরিদুল মোস্তফা খানকে পুলিশ হেফাজতে লোমহর্ষক নিপীড়ন করা হয়। তাকে ক্রসফায়ারে দেয়ার পরিকল্পনা করে ওসি প্রদীপ। পানির পরিবর্তে পশ্রাব খাওয়ানো হয়। নির্যাতনে তার চোখ ফুলে যায়। এসব প্রত্যক্ষ করে সারাদেশের সাংবাদিকরা ফুঁসে উঠে। তারা মানববন্ধন ও এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। বিডি২৪ লাইভ ও দৈনিক আমাদের কন্ঠে সংবাদ প্রকাশ হলে আন্দোলন শুরু হয়। ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক বনেক কেন্দ্রীয় কমটির পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলি প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বরাবর লিখিত আবেদন করে।
ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির এসআই আক্রাম হোসেনের বিরুদ্ধে নিজের সোর্স দিয়ে মাদক ব্যবসা, গ্রেপ্তার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এসআই আক্রাম দৈনিক ময়মনসিংহ প্রতিদিন সম্পাদক খায়রুল আলম রফিকের উপর ক্ষুদ্ধ হয়। তার রোষানলে নৃশংসতার শিকার হন সাংবাদিক রফিক।
২০১৮ সালে সংবাদ প্রকাশের জেড় ধরে ঐবছরের ২৯ নভেম্বর খায়রুল আলম রফিককে গ্রেপ্তার করে এসআই আক্রাম হোসেন। গ্রেপ্তার করার পর থেকেই খায়রুল আলম রফিকের চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের ছবি তুলে প্রতিপক্ষের হাতেও তুলে দেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর রফিককে আসামি করে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় মামলা। চলতি সপ্তাহে রফিকের চোখবাঁধা ছবি আবারও ভাইরাল হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝর উঠেছে ।
Leave a Reply