সম্পাদকীয় (পর্ব -১)
বিষয়:টেকনাফবাসীর এক যুগের প্রাপ্তি ও অর্জন।
এক. কলঙ্ক !!
টেকনাফ পৌরসভায় খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কায়ুকখালী পাড়া, আলিয়াবাদ এর একাংশ,ডেইলপাড়া, উত্তরঃ মধ্যম ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়া এবং খানকার ডেইল এ এই সংকট প্রকট। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করে।
টেকনাফ পৌরসভা গঠিত হয়ে ২০ বছরের অধিক সময় পার হয়েছে।এই দীর্ঘ সময়ে পৌরসভার জনগণের জন্য খাবার পানির কোন স্থায়ী ব্যবস্থা পৌর কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত করতে পারেন নাই।
পৌরসভা গঠিত হওয়ার পরে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য প্রয়াত মরহুম আলহাজ্ব অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী, টেকনাফ পৌরসভার জন্য একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর প্রকল্প স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালেয় প্রদান করেছিলেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে এই প্রকল্প ধামাচাপা পড়ে।
পরে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করেন,গত এক যুগ ধরে সরকার পরিচালনা করছেন।
টেকনাফ পৌরসভার একটি পরিবার থেকে পরপর তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় । পরপর দুইবার একই পরিবার থেকে (সাবেক সাংসদের চাচা) আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পৌর মেয়র নির্বাচিত হয়।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী সময়ে সমগ্র দেশে উন্নয়ন ও অগ্রগতি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার প্রকল্পের দুটি কাজ টেকনাফে চলমান আছে , সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন ও জালিয়ার দ্বীপ ইকো ট্যুরিজম পার্ক। ইতিমধ্যে মেরিন ড্রাইভ এর কার্যক্রম শেষ হয়েছে। শাহপরীরদ্বীপ বেড়িবাঁধ এর কাজ ও চলছে।
টেকনাফে একই পরিবারে সংসদ সদস্য ও মেয়র পদ দুটি থাকা সত্ত্বেও পৌরসভার মানুষের কাঙ্খিত উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। বিশেষ করে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো এপর্যন্ত পূরণ হয়নি। যেমন – খাবার পানির সংকট , বিদ্যুতের চরম ভোগান্তি , পৌরবাসীর মৌলিক সেবা সমূহ ( জন্ম, মৃত্যু, ওয়ারিশ ও নাগরিক সনদ ইত্যাদি ) প্রাপ্তিতে সীমাহীন ভোগান্তি , প্রধান সড়ক যে সড়ক উনচিপ্রাং পর্যন্ত খানা খন্দকে ভরা , নাফ নদীতে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের মাছ শিকারে চার বছরেরও অধিক সময় ধরে নিষেধাজ্ঞার বিষয়সহ ইত্যাদি ইত্যাদি।
দুঃখজনক হলেও সত্য এই এক যুগেরও বেশী সময়ে টেকনাফ-উখিয়া বাসীর সবচেয়ে বড় অর্জন বা প্রাপ্তি ইয়াবা মাদক চোরাচালান এর কারণে দেশবাসীর নিকট বিশেষভাবে পরিচিতি পাওয়া। আমরা টেকনাফ-উখিয়ার জনগণ বারবার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় শিরোনাম হয়ে আলোচিত , সমালোচিত, নিন্দিত কলঙ্কিত হয়েছি। সমগ্র দেশবাসীর কাছে লজ্জিত ও অপমানিত হয়েছি। রাস্তায় চলার পথে চেকপোষ্টে-চেকপোস্টে সীমাহীন লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছি এবং হচ্ছি।
মাদক চোরাচালান করে অত্র এলাকার বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বাসিন্দারা আমাদেরকে লজ্জিত ও কলঙ্কিত করে-রাজা,সম্রাট, গডফাদার ইত্যাদি বিভিন্ন খেতাব অর্জন করেছে।
মাদক চোরাকারবারীরা আমাদের জন্য বয়ে এনেছে সীমাহীন দুর্নাম ও কলঙ্ক। সমগ্র দেশবাসীর কাছে টেকনাফ একটি কলঙ্কিত মাদক চোরাচালান এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। যেখানে দেশবাসী মনে করে অত্র এলাকার বেশিরভাগ লোক মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। যা অত্র এলাকার বেশিরভাগ বাসীন্দাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক, দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক।
এই ব্যর্থতা, লজ্জা ও কলঙ্ক অত্র এলাকার নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা কখনো এড়িয়ে যেতে পারেন না। এই ব্যর্থতা তাদের উপর বর্তায়। এই নেতৃত্ব টেকনাফ বাসীকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। সকল মাদক ইয়াবা গডফাদার,চোরাকারবারী ও গড-ফাদার চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষকরা আইনের আওতায় না আসায়, এলাকার শত/হাজার লোক বিপথগামী হয়েছে ও এখনো হচ্ছে।
একই পরিবারের অনেক সদস্য দীর্ঘ বছর থেকে বিভিন্ন সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাদক চোরাচালানের শীর্ষ তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকার করে নিয়েছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে এই মাদক চোরাচালানের অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছিল।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মরণব্যাধি মাদক ইয়াবার অনুপ্রবেশ রোধ ও মরণব্যাধি ইয়াবার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে , ১৭/০৫/২০১৮ ইং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মরণনেশা ইয়াবা ট্যাবলেট এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযান এবং অনমনীয় মনোভাবের ফলে অত্র এলাকার ইয়াবার গডফাদার, ইয়াবা ব্যবসার পৃষ্ঠপোষক ইয়াবা চোরাকারবারীরা সেই সময় অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্ধুক যুদ্ধে অনেকে নিহত হন। মাদকবিরোধী ব্যাপক অভিযান ও হতাহতের ঘটনায় ইয়াবা মাদক চোরাকারবারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারই ফলশ্রুতিতে শীর্ষ মাদক চোরাকারবারীরা ২০১৯ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট প্রথম দফায় ১০২ জন আত্মস্বীকৃত মাদক চোরাকারবারি গডফাদার আত্মসমর্পণ করে।
সেই দিন আমরা টেকনাফবাসী দেশ ও বিশ্ববাসীর নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে কলঙ্কিত ও লজ্জিত হয়েছিলাম।
আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা মাদক চোরাকারবারি গডফাদারদের মধ্যে একই পরিবারের অনেক সদস্য প্রথম সারিতে স্থান করে নিয়ে,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার করা মাদক ইয়াবা চোরাকারবারি, গডফাদার ও পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা সত্য ও সঠিক ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। ( চলবে )
লিংকটি পড়বেন ।
https://www.thedailystar.net/bangla/শীর্ষ-খবর/একটি-ইয়াবা-পরিবার-106270
সাইফুদ্দিন খালেদ,
(পিতা মরহুম হাজী আব্দুল গনি, সাবেক সংসদ সদস্য উখিয়া-টেকনাফ)
সভাপতি,
সেক্টর কমান্ডার’স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ’৭১
টেকনাফ উপজেলা শাখা ও সম্পাদক টেকনাফ ৭১ ডটকম
২৮/০৫/২০২১ ইং।
Leave a Reply