আবুল হাসেম,খাগড়াছড়ি
নিষ্ঠুরতা কে ও হার মানিয়েছে নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোর এহেন পশুসুলভ আচরণে। মানবিকতা যেন আজ শিকলে বন্ধি। সস্তাটিনের বেষ্টনে জেলখানা সদৃশ একটি ঘরে বর্তমানে তার বসাবাস। তার পরিবারের এহেন কর্মকান্ডে ওই এলাকার সমাজ ব্যাবস্থা, সচেতন মহল,জনপ্রতিনিধির কেহই এর দায় এড়াতে পারে ন।
সাত বছর ধরে নিজের বিভৎস সাজা ভোগ করছে জামাল। তবে কাউকে খুন করেনি সে। যেভাবে দু’পায়ে শেকল পেঁচিয়ে তালা দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে কারা অভ্যন্তরে কোনো দুধর্ষ কিংবা মৃতুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীকেও এভাবে রাখা হয় না। দু’পায়ের মধ্যে দুই ইঞ্চিও ফাঁকা নেই। এভাবে বন্দীভাবেই নাওয়া-খাওয়া, আহার নিদ্রা এবং মলমূত্র ত্যাগ করতে হয় তাকে। এখানে কেবল মানবিকতাই হেয়ে যায়নি, এই বাস্তবতা অমানবিকতাকেও ছাপিয়ে গেছে।
আপন পিতা ও ভাইয়েরা তাকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন। কারণ হিসেবে পরিবারের সদস্যরা জানালেন,ছেড়ে দিলেই নাকি পাগলামি করে জামাল। মানুষের ঘর-বাড়িতে গিয়ে উৎপাত করে, জামা-কাপড় ছিঁড়ে নিয়ে আসে।
জামালের বয়স এখন বত্রিশ। টগবগে এক যুবক। তবে ‘পাগল যুবক। মেধাবী জামালের পাগল হয়ে ওঠার পেছনের রহস্যটা ঠিকঠাক জানা যায় নি।
অনুসন্ধানে যানা যায়,জামাল হোসেন,খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কুমিল্লাটিলার প্রাক্তন মেম্বার মো.জালাল হোসেনের ছেলে। নয় ভাই বোনের মধ্যে জামাল হোসেন চতুর্থ। জামালের দু’বছর বয়সে তার মায়ের মৃত্যু হয়।
জামাল খুব মেধাবী ছিলেন,শিশু বয়সে মায়ের শূন্যতা প্রভাব ফেলে তার জীবনে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় একদিন বাড়িতে কিছু না বলে চট্টগ্রামের হাটহাজারি চলে যায় সে। সেখানে গিয়ে একটা রেস্তোরায় বয়ের কাজ করে।
সঙ্গ দোষে নেশায় আসক্ত হয়ে যায় সে। এক তরুণীর সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে ২০১০ সালে ওই তরুণীকে হাটহাজারীতেই বিয়ে করে। একটি ভাড়া বাসায় শুরু হয় তাদের সংসার। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানের পিতা হন জামাল।
সংসার জীবনের সুখ টেকসই হলো না নেশার কারণে ২০১৪ সাল থেকে সে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকে। এরপর জামালকে নিয়ে আসা হয় তবলছড়ির কুমিল্লাটিলায় পৈতৃক বাড়িতে। স্ত্রী’র সাথেও ইতোমধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তার।
কিছুদিন পরপর শেঁকল ছিঁড়ে পালিয়ে যায় সে। আবার তাকে ধরে এনে এভাবেই বেঁধে রাখা হয়। ২০১৪ থেকে ২০২১, এভাবেই চলছে তার জিবন।সারাদিনে দু’বেলা ভাত আর একবেলা নাস্তা দেয়া হয় তাকে। তাও জামালের ভাগের জমি বিক্রির টাকায়। এমন জীবন থেকে মুক্তি চায় জামাল। সুস্থ্য, সুন্দর ও মুক্ত জীবন ফিরে যেতে চায় সে। প্রশ্ন হলো এ শেঁকল খুলবে কে? কে নিবে জামালের দায়িত্ব?
জামাল জানান,আমাকে সবাই পাগল মনে করে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখছে,মূলত আমি পাগল না। আমার ভাই'রা আমাকে বেঁধে রাখছে,আমি খুব কষ্টে আছি। ছাড়া পেলে আমি নামাজ পড়বো,আমি সুস্থভাবে বাঁচতে চাই।
প্রতিবেশীরা জানান,উন্নত চিকিৎসা সেবা না দিয়ে তাকে এভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অন্যায়,এর পেছনে সম্পত্তি সম্পর্কিত কোন রহস্য থাকতে পারে। তাকে নামমাত্র চিকিৎসা সেবা দেয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল।
তবে ভালো চিকিৎসা দিলে সে ভাল হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকে মন্তব্য করেন।
স্থানীয় মেম্বার আবুল হাসেম জানান,জামাল দীর্ঘবছর ধরে মানসকি প্রতিবন্ধি,সে ছাড়া পেলে প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে নারীদের উত্ত্যক্ত করে। এছাড়াও রোদের শুকানো কাপড় নিয়ে আসে একই সাথে এসব কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। তার এমন উগ্র আচরণে পাড়ার সকলে অতিষ্ট যার কারণে তাকে বেঁধে রাখে তার স্বজনরা। তবে সে উন্নত চিকিৎসা পেলে ভাল হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি।###
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com