নাছির উদ্দীন রাজ, টেকনাফ
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের প্রশাসনিক ভবনসহ ৫০টি শিল্প ও অবকাঠামোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২০ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ উদ্বোধন করেন তিনি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন একযোগে মোট আটটি ভেন্যু থেকে অনুষ্ঠিত হয়। ভেন্যুগুলো হলো- গণভবন, ঢাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (মিরসরাই, চট্টগ্রাম), শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল (শ্রীহট্ট, মৌলভীবাজার), কর্ণফুলী ড্রাইডক এসইজেড (আনোয়ারা, চট্টগ্রাম), মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অর্থনৈতিক অঞ্চল (সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ), জামালপুর অর্থনতিক অঞ্চল (জামাপুর সদর), সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক (সাবরাং, কক্সবাজার) ও হোসেন্দি অর্থনৈতিক অঞ্চল (গজারিয়া, মুন্সিগঞ্জ)।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের ওপর ভিডিও প্রদর্শন শেষে চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান রহমান বক্তব্য দেন।
এ উপলক্ষে টেকনাফ সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সাংসদ (উখিয়া – টেকনাফ) শাহীন আক্তার চৌধুরী এমপি,কক্সবাজার-রামু সদর আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়া’র সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ, উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি, কক্সবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল, জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম,সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বি এ, হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, বাহার ছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন,জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর প্রমুখ।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বেশ কিছু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেজা সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মতো ইউটিলিটির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানকে অতি দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু করার তাগিদ দেন ইউসুফ হারুন। পাশাপাশি এই অঞ্চলের প্রকৃতি ও জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণে রেখে পাঁচ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে বলেও জানান বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
বেজা জানায়, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে গ্রেট আউটডোর অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার লিমিটেড, গ্রিন অরচার্ড হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং সানসেট বে লিমিটেড নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান ৫.৫ একর জমিতে ৩২.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি পাঁচ তারকা ও তিন তারকা মানের হোটেলসহ পর্যটনবান্ধব বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এছাড়াও বিনিয়োগকারীর তালিকায় নেদারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মোট প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৩৪.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বেজা আরও জানায়, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এরই মধ্যে প্রশাসনিক ভবন, ডাইক নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, ছয় ভেন্ট স্লুইস গেট (রেগুলেটর) নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের জুনে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আইকনিক ফটো কর্নার উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া এখানে প্রতিরক্ষা বাঁধ, ভূমি উন্নয়ন কাজসহ পানি সরবরাহ লাইন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ চলমান আছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে দুটি গেট ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, ৯৬৪.৯৫ একর আয়তনের এই পার্ক কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত। পার্কটি ঢাকা থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার ও কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া জাতীয় মহাসড়ক এন-১-এর মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ৩৯ হাজার পর্যটক উপভোগ করতে পারবে। এতে করে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
Leave a Reply