টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে স্পিডবোট সার্ভিস। এতে করে সাধারণ যাত্রীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। স্থানীয় ও পর্যটকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে ধারণ ক্ষমতার বাহিরে যাত্রী বহন করছে। অনিয়ম – অব্যবস্থাপনা ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, অর্থে বিনিময়ে সিরিয়াল দেওয়া ও সিরিয়াল পরিবর্তন করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত জাহাঙ্গীর নামের এক লাইনম্যানের বিরুদ্ধে।
অবশ্যই অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও নানা অনিয়মে জড়িত ব্যক্তি যে হোক না কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝের এ দ্বীপ নিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণের কোনো শেষ নেই। সেন্টমার্টিন-টেকনাফ নৌ-রুটে দীর্ঘদিন জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকলেও পর্যটন মৌসুমে প্রতিনিয়ত দ্বীপে ছুটে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। এসব পর্যটকদের বহন করতে টেকনাফ পৌরসভার কে কে খালের ঘাট থেকে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করে ৪৫ থেকে ৫৫ টি স্পিড বোট। যার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে দ্বীপের স্থানীয় প্রভাবশালী বোট লাইনম্যান জাহাঙ্গীর।
তার বিরুদ্ধে, বিভিন্ন সময় প্রশাসনের নাম ও ক্ষমতা ব্যবহার করে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী ও টাকা নেওয়া, পর্যটকদের সাথে দুর্ব্যবহার, স্বজনপ্রীতি করে সিরিয়াল বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে তার ব্যক্তিগত ইচ্ছেমতে যেকোনো স্পীডবোট যাত্রী উঠিয়ে দেওয়াসহ ইত্যাদি অভিযোগ করছে স্থানীয় পর্যটক ও মালিক-শ্রমিকরা। জাহাঙ্গীর আবার বোট মালিকও । তার নিজস্ব কয়েকটি স্পিডবোটসহ বিভিন্ন মাদক কারবারি ও অসাধু ব্যক্তিদের ৫ থেকে ৬ টা স্প্রিডবোট তার নিয়ন্ত্রণে চালানো হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। যার কারণে ঝুঁকি নিয়ে, স্থানীয়-পর্যটকদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে স্পিডবোট শ্রমিক, মালিক পর্যটকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি এমনকি স্পিড বোর্ড লাইন থেকে বাতিল করে দিবে বলে হুমকি দেওয়ার মতোও অভিযোগ রয়েছে লাইনম্যান জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সকালে সেন্টমার্টিন জেটি ঘাট গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। এমনকি সে সেন্টমার্টিনে বসে টেকনাফ পৌরসভার কে কে খাল থেকে আসা স্প্রীডবোড গুলো নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে।
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন দেখতে ঢাকা থেকে পরিবারসহ আসা পর্যটক নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় স্পিডবোট যুগে পরিবারসহ সেন্টমার্টিন গিয়েছিলাম। আসার পথে আমাদের সিরিয়াল অনেক আগে থেকে বুকিং করা ছিল। কিন্তু ওই কথিত লাইনম্যান জাহাঙ্গীর তার ইচ্ছামত আমাদেরকে বসিয়ে রেখে আমাদের অনেক পরে যারা বুকিংয়ে এসেছে তাদের অর্থের বিনিময়ে আগে যাওয়া ও আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি আমাদের স্পিডবোটে ধারণক্ষমতা ৮ জন হওয়ার পরও অতিরিক্ত আরেকজনকে ৭’শ টাকা নিয়ে আমাদের স্পিডবোটে উঠিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, করার কিছু নাই আমাদের বাধ্য হয়ে চলে আসতে হয়েছে টেকনাফে। এভাবে আরও কত কত স্থানীয় ও পর্যটকরা লাইনম্যান জাহাঙ্গীর এর কাছে হয়রানির শিকার হবে বা হয়েছে আল্লাহ জানে। আমি স্থানীয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বলবো তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্পিডবোট চালক ও মালিকরা বলেন, এই কথিত লাইনম্যান জাহাঙ্গীরের নানা অনিয়ম অত্যাচারে অতিষ্ঠ পর্যটকসহ স্প্রীডবোড শ্রমিক- মালিকগণ। তার হাত নাকি অনেক উপরে। লাইনম্যান জাহাঙ্গীর নির্দিষ্ট আসনের চাইতে অতিরিক্ত বিক্রি, সিরিয়াল বাণিজ্য ইত্যাদির সাথে জড়িত। যার কারণে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। প্রশাসনের এখনই উচিত তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।
সেন্টমার্টিন স্পিডবোট মালিক মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলমের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে, অভিযোগ গুলো জানার পরে এবিষয়ে পরে জানানো হবে বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী জানান, স্থানীয় ও পর্যটকদের যানমাল ও নিরাপত্তা সু-ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব। তবে অভিযুক্ত লাইনম্যান জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক যথাযত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।###
Leave a Reply