টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
দেশের সীমান্তবর্তী জায়গা হচ্ছে শাহপরীরদ্বীপ। যার অধিকাংশ এলাকা বাঁধ ভেঙে জোয়ার-ভাটায় তলিয়ে যেত। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ত এ দ্বীপে বসবাসকারী অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে অনেক সম্পদও। এসব থেকে মুক্তি মিলছে শাহপরীর দ্বীপবাসীর। দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিললে ও শাহপরীরদ্বীপের সংস্কার করা সড়কে লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল হচ্ছে নতুন মহাসড়ক। ফলে বিপদজ্জনক এ মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। নিয়ম থাকলেও লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহার করা হচ্ছে না।
জানা যায়, এ মৌসুমে শাহপরীর দ্বীপ এলাকায় লবণ উৎপাদিত হয় বেশি। নৌপথ ও স্থলপথে এসব লবণ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রেরণ করা হয়। নৌপথে পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় মূলত সড়কপথে ট্রাকে করেই এসবস্থানে লবণ পরিবহন করা হয়। নিয়মানুযায়ী লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স ব্যবহার না করায় পুরো রাস্তায় ঝরে ঝরে পানি পড়ে। এছাড়া মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি পড়ে। রাতে কুয়াশার স্পর্শে লবণ নিঃসৃত পানি ও কাঁচা মাটি রাস্তায় আঠালো আস্তরণ সৃষ্টি করে। ফলে চলমান গাড়ি ব্রেক কষলেই আঠালো আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ঘটে দুর্ঘটনা। প্রতিদিনের মহাসড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে প্রাণহানি। আবার অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করার অবস্থা। শাহপরীরদ্বীপ দীর্ঘ বছর পর নতুন সড়ক পেয়ে চাকুরিজীবীরা আর ঘর নিয়ে থাকে না।তারা সন্ধা হলে মটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। নতুন সড়ক উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে শাহপরীরদ্বীপ মানুষের আসা যাওয়া আরেক বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।লবণ নিঃসৃত পানি।
গত চারদিনআগে সিএনজি খালে নেমে গেছে বলে জানায় চালক। শাহপরীরদ্বীপ রাস্তা বড় ব্রীজের আগে ছোট-বড় প্রায় ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। আহত হয়েছে অনেকে। টেকনাফ থেকে রাতে শাহপরীরদ্বীপ যাওয়া পথযাত্রীরা আতংকে রাতে আর শাহপরীরদ্বীপ যায় না তারা। আর কোন বিকল্প পথ ব্যবহার করে তারা বাড়ি ফিরে বলে অনেকেই জানিয়েছেন এমন তথ্য।
শাহপরীরদ্বীপ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগে নেতা মুহাম্মদ জুবায়ের জানান, আমি এক সপ্তাহ আগে টেকনাফ হয়ে মটর সাইকেল যোগে শাহপরীরদ্বীপ ফিরতেছি। হঠাৎ লবণ নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল হওয়া রাস্তায় ব্রেক কষলেই আঠালো আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। প্রায় ১০ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। এখনো পায়ে ব্যথা রয়ে গেছে। আমি সবার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি যে কোন শাহপরীরদ্বীপ সড়ক থেকে লবণ ট্রাক বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলন করতে হবে।
স্থানীয় সাংবাদিক জাকারিয়া আলফাজ জানান, প্রায় এক যুগ পর শাহপরীরদ্বীপে ভেঙে যাওয়া সড়ক নতুন ভাবে ফিরে পাওয়ায় এ সড়কে দিন দিন গাড়ি চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সড়ক সুন্দর হলে ও দুর্ঘটনা হচ্ছে। এদিকে গাড়ি চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা তো রয়েছে। কে কার আগে যাবে। ফলে পিচ্ছিল সড়কে ওভারটেক করতে গিয়ে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। নতুবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের পাশাপাশি সড়কে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।প্রশাসনের পক্ষ থেকে লবণ পরিবহনে ট্রাকে পলিথিন ব্যবহারে বারবার অবহিত করা হলেও লবণ ব্যবসায়ীরা সেটি কর্ণপাত করছেন না।
মোটরসাইকেল আরোহী নুরুল আমিন জানান, প্রতিদিন লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত হারিয়াখালী থেকে শাহপরীরদ্বীপ সড়কে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আবার দিনে সূর্যের আলোতে পিচ্ছিল রাস্তা শুকিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় গাছপালার কারণে আলো না পড়ায় পিচ্ছিলই থেকে যায়। তাই মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সময় সমান্য ব্রেক কষলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় রাস্তা এতো পিচ্ছিল থাকে ব্রেক না কষলেও দুর্ঘটনা ঘটে।আঠালো মহাসড়কে গাড়ি চালাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে একাধিক চালক জানিয়েছেন।
শাহপরীরদ্বীপ ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন,, লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানি ও পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি রাস্তায় পড়ে একটি আস্তরণ সৃষ্টি হচ্ছে। ওই আস্তরণে কুয়াশার স্পর্শে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে সড়কে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে, এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকবাহী গাড়ি টেকনাফ যায় এবং আসে। আগে থেকে এই সড়ক সম্পর্কে চালকদের ধারণা না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। তাই লবণবাহী ট্রাক থেকে যাতে পানি নিঃসৃত না হয় ও পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি রাস্তায় না পড়ে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিক মিয়া জানান,নিয়মানুযায়ী লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স ব্যবহার করতে হবে না করলে পুরো রাস্তায় পানি ঝরে পড়ে। ঠিক আছে আমাকে কয়েকজন অবগত করছে আমি এ বিষয়ে সব লবণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সীদ্ধান্ত নিব।
টেকনাফ ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ মোশারফ হোসেন জানান, টেকনাফ যেকোনো সড়কে লবণবাহী ট্রাকে উপরে-নিচে মোটা ত্রিপল ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে লবণ নিঃসৃত পানি মহাসড়কে না পড়ে। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযান চালানো হবে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অতিশীঘ্রই লবণ মালিকদের সঙ্গে বসব। যাঁরা সড়কের পাশে লবণ আনলোড করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
Leave a Reply