কক্সবাজার প্রতিনিধি।
মোহাম্মদ কাশেম ওরফে কাশেম তালুকদার (৩৫)। উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের খয়রাতি পাড়ার মৃত মো. হোসাইনের পুত্র তিনি। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনা করেছে আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় পড়াশোনা শেষ করে স্বপ্ন দেখেন রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার। কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তার মামাত ভাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামির হাতধরে চুপিসারে নেমে পড়ে ইয়াবা কারবারে। মামাত ভাইয়ের হাতধরে মাদক কারবারে জড়ানোর পরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি কাশেমকে। অত্যন্ত চতুরতার সাথে ইয়াবা কারবার চালিয়ে অল্প সময়ে বনে যান কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
প্রশাসন ও সাধারণ পাবলিকের চোখের আড়ালে থাকতে চতুর কাশেম ইয়াবার টাকায় প্রথমে গড়ে তুলেন ‘ল্যাব মেডিকা’ নামে একটি প্যাথলজি সেন্টার। সেই প্যাথলজি সেন্টারের আড়ালে চালিয়ে যেতে থাকে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। আর অল্প দিনেই বনে যান জমি-জমাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
প্রশাসন ও সাধারণ পাবলিকের চোখের আড়ালে থাকতে চতুর কাশেম ইয়াবার টাকায় প্রথমে গড়ে তুলেন ‘ল্যাব মেডিকা’ নামে একটি প্যাথলজি সেন্টার। সেই প্যাথলজি সেন্টারের আড়ালে চালিয়ে যেতে থাকে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। আর অল্প দিনেই বনে যান জমি-জমাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের লেজির পাড়া এলাকা থেকে কাশিমকে (পুরাতন রোহিঙ্গা) ৭০ হাজার ইয়াবা, ২০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ টাকাসহ আটক করে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ। পরবর্তীতে আটক কারবারির স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে উদ্ধারকৃত ইয়াবার চালানের মূল মালিক লেজির পাড়া এলাকার মকতুল হোসাইনের পুত্র মো. ইদ্রিস ও খয়রাতি পাড়ার মো. হোসেন এর পুত্র মো. কাশেম।
৭০ হাজার ইয়াবা ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় ৫জনকে আসামি করে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় সাবরাংয়ের খয়রাতিপাড়ার মৃত মুহাম্মদ হোসেনের পুত্র শীর্ষ ইয়াবাডন কাশেমকে ৩ নং আসামি করা হয়েছে।এই ঘটনার পর থেকেই ইয়াবা কারবারী মো. কাশেমের ইয়াবা কানেকশনের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই ৭০ হাজার ইয়াবা ও ২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধারের মামলার গ্রেপ্তার এড়িয়ে চার্জশীট থেকে নিজের নাম বাদ দেয়ার জন্য দিকবেদিক ছুটাছুটি করছে বলে জানা গেছে।
তবে পুলিশ বলছে, তাকে আটক করা হবে। পরে আইনগত ব্যবস্থা যেটা হওয়ার তা-ই নেয়া হবে।
অভিযোগ রয়েছে , সাবরাং ইউপির লেজির পাড়ায় কাশেম তালুকদারের ছোট বোনের বাড়ি হওয়ায় সেখানে কাশেমের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে । আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ও আত্মস্বীকৃত ইয়াবা গডফাদার ইদ্রিসের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে কাশেম। ইদ্রিসের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় বড় চালান এনে বোনের বাড়িতে সংরক্ষণ করে। সুবিধামতো সেইখান থেকে পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবাগুলো পাচার করে। বোনের বাড়িটি ইয়াবার গুদাম হিসেবে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান এই কাশেম।এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, মো. কাশেম এর পরিবারে বিগত ৫/৬ বছর আগে জীবিকা নির্বাহ করাটাও চ্যালেঞ্জ ছিল। বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। নির্মাণ করছে আলিশান বাড়ি। এই বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক কোটি টাকার উর্ধ্বে। তার হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে এলাকাবাসীও হতবাক!
স্থানীয়রা জানান, সাবরাং খয়রাতি পাড়াস্থ নির্মানাধীন ডু-প্লেক্স বাড়ির সামনের পুরো মার্কেট, মার্কেটের সামনের খালি জমির (কড়াপ্রতি ক্রয়মূল্য ১লক্ষ টাকা) মালিকানাও তাঁর। এছাড়া নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক ইয়াবাডন কাশেম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কাশেম তালুকদারের বাবা মো. হোসাইন সাবরাং বাজারের এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সহকারী ছিলেন। দৈনিক ৫০ টাকা মজুরিতে এত বড় সংসার চালানো চরম কঠিন ছিল তার বাবার। তাই আত্মীয়-স্বজনের দয়া-দাক্ষিণ্যে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতেন তিনি। যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরাত অবস্থা, সেখানে তারা আজ কোটি টাকার মালিক। প্রথম দিকে খুচরা ব্যাপারি হিসেবে মাদক কারবার চালালেও একপর্যায়ে মিয়ানমারের এক মাদক কারবারীর সঙ্গে পরিচয় হয় কাশেম তালুকদারের। আর এই পরিচয়ের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার ইদ্রিস। কিন্তু ভগ্নিপতিসহ আপন ছোট ভাই মো. ইউসুফ বিপুল ইয়াবা নিয়ে র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর থেকে কৌশল পরিবর্তন করেই মাদক কারবার চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এই কাশেম নিজেকে প্যাথলজি সেন্টারের মালিক দাবি করলেও সেখানে সময় দেয় কালেভাদ্রে। চতুর কাশেম নিজের অবস্থানকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ল্যাব মেডিকা প্যাথলজি সেন্টারের ব্যানারে (ইয়াবার কালো টাকায়) উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় শুরু হওয়া ফুটবল/ক্রিকেট টুর্নামেন্টে স্পন্সর করে নিজেকে বড় মাপের ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে বেশ পরিচিত লাভ করেছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র/যুবনেতা দের সঙ্গে কৌশলে খাতির জমিয়ে রেখেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মো. কাশেম বড়মাপের ইয়াবা গডফাদার। কয়েক বছর আগেও তার কিছু ছিলো না। বর্তমানে গাড়ি, বাড়ি, জমিসহ কোটি কোটি টাকার মালিক। আগামী মাসে টেকনাফ পৌরসভা থেকে ২০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে বিয়ে করছে সেই কাশেম তালুকদার। যেখানে স্বর্ণের বর্তমান বাজারদর ভরি প্রতি ৯৪ হাজার টাকা। বলতে গেলে অনেকটা জিরো থেকে কয়েক বছরে ইয়াবার বদান্যতায় বনে যায় হিরো। বিষয়টি তদন্ত করলে কাশেমের ইয়াবা পাচারের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
এবিষয়ে টেকনাফ পৌরসভার একটি প্যাথলজি সেন্টার কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, টেকনাফে প্যাথলজি সেন্টারগুলোতে ব্লাড টেস্ট, এক্স-রে এবং ইসিজি ছাড়া তেমন কিছু নেই। অনেক সময় বিদ্যুৎ বিল, স্টাফ খরচ সহ অন্যান্য খরচ বাদ দিলে লভ্যাংশ হয় খুব কম। টেকনাফের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটা প্যাথলজি সেন্টার থেকে ডু-প্লেক্স বাড়ি, কোটি টাকার মার্কেট, মেরিন ড্রাইভ থেকে জমি কেনা স্বপ্ন ছাড়া বাস্তবে সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা টেকনাফ মডেল থানার এসআই সাজ্জাদ হোসেন সজীব বলেন,সে যেহেতু আসামি অবশ্যই তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। পরে আইনানুযায়ী যেটা হওয়ার সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র – প্রতিদিনের সংবাদ।
Leave a Reply