নাছির উদ্দীন রাজ , টেকনাফ।
কক্সবাজার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ও কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগে হানা না দেওয়ায় ফলনে ভরপুর সুপারির বাগানগুলো। বাজারে সুপারির দামও আশাতীত ভাল হওয়ায় কৃষকেরাও খুশি।
স্থানীয় সুপারী ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফের বাহার ছড়া শামলাপুর , জাহাজপুরা , টেকনাফ সদর , উখিয়া সদর, সোনাপাড়া, মরিচ্যা ও কোর্টবাজার বাজার থেকে সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে চালান হয়। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি সুপারি বাগান মালিকেরাও তাদের উৎপাদিত অর্থকারী ফসল সুপারি বাজারজাত করে বিক্রির মাধ্যমে অনেক অস্বচ্ছল পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে বলে সুপারি ব্যবসায়ীদের অভিমত।
টেকনাফের পান-সুপারি উৎপাদনের অন্যতম ইউনিয়ন বাহারছড়া শামলাপুর বাজার ঘুরে সুপারি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার শামলাপুর বাজার বসে। এ বাজারে অর্থকারী ফসলের মধ্যে পান-সুপারি লেনদেন অন্যতম।
সাপ্তাহিক দুই দিন হাটবাজার থেকে প্রায় ২০ টন ওজনের ৫/৬ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন আড়তে যায়। উপজেলার বাহারছড়া শিলখালীর চাষি জাগের হোসেন বলেন, এক কানি (৪০ শতক) জমিতে সৃজিত ৪৫৮টি গাছে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে সুপারি ধরেছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। এবার সুপারির বাজারমূল্য থাকায় এই বাগান থেকেই প্রায় ৩ লাখ টাকার সুপারি বিক্রির মাধ্যমে আয় করা সম্ভব বলে মনে করি ।
স্থানীয়রা জানান, আদিকাল থেকেই দেশে টেকনাফ-উখিয়ার সুপারির আলাদা কদর রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত শহরে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল সুপারির বাগান। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমেই একসঙ্গে নামে পাকা সুপারি। তারি ধারাবাহিকতায় বর্তমানে টেকনাফ-উখিয়ায় জমে উঠেছে সুপারির হাট। প্রথম দিকে দাম কম পেলেও এখন বাজারে সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।
তবে জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারী হাট টেকনাফের বাহারছড়া, শামলাপুর, উখিয়ার সোনারপাড়া , মরিচ্যা , কোটবাজার। টেকনাফ শামলাপুর বাজারে সাপ্তাহে দুই দিন শনিবার ও মঙ্গলবার বড় পাইকারী হাট বসে। এ বাজারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে সুপারি ক্রয় করে নিয়ে যায়।
সুপারি ব্যবসায়ীরা মোহাম্মদ আলী জানান, মৌসুমে টেকনাফ -উখিয়ায় হাট- বাজার ও বিভিন্ন স্থানে সুপারি বেচা কেনা হয়। চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে সেগুলো বিক্রি করে থাকি। কাচা সুপারি রোদে শুকিয়ে সুপারির খোসা (খোলস) ফেলে দিয়ে প্রতি কেজি শুকনা সুপারি ৪শ থেকে ৫শ টাকা দরে বিক্রি হয় । পাকা সুপারি বাজার থেকে কিনে পানিতে ৩ থেকে ৪ মাস রেখে দিয়ে (ভিজিয়ে) সেগুলো বাজারে বিক্রি করি। আবার পানিতে ভেজানো সুপারিকে স্থানীয় ভাষায় ভিজা সুপারি বলে, এই ভিজা সুপারির চাহিদা বেশি তাই দামও ভাল পাওয়া যায়।
স্থানীয় একচাষা জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে খরচ অনেক কম। চারা লাগানোর প্রথম ২-৩ বছর একটু কষ্ট করতে হয়। তখন ছোট চারা গরু ছাগলে খেয়ে ফেলার ভয় থাকে। প্রথম দিকে জমিতে স্বল্প পরিমাণ সারও দিতে হয়। ৫-৬ বছর পর গাছে ফল আসে। একবার ফল আসলে একাধারে অন্তত ৪০ বছর ফল পাওয়া যায়। ফল আসার পরে তেমন কোন খরচ হয়না। প্রতিটা গাছ থেকে বছরে আকারভেদে ৩শ থেকে ৫শ পিস সুপারি পাওয়া যায়।
শামলাপুর বাজারের ব্যাবসায়ী নুরুন্নবী জানান, স্থানীয় ভাবে ৮০ পিস সুপারিতে এক পন হয়। বর্তমান বাজারে প্রতি পন সুপারি ২শ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মৌসুমে আমরা বিভিন্ন বাজার ও গ্রামের চাষিদের কাছ থেকে সুপারি কিনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি এতে আমাদের লাভ ভাল হয়।
তিনি আরো জানান, উখিয়া-টেকনাফের প্রধান অর্থকারী ফসল সুপারী। দুই উপজেলার সুপারি আসে শামলাপুর বাজারে। শনি ও মঙ্গলবার শামলাপুর বাজারে হাট বসে। শামলাপুর বাজারে যে সুপারি আসে তা রাখার মত জায়গা নেই।বাজার পর্যান্ত বড় করে চাষী ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। এই বাজারে সরকার প্রতিবছর লাখ টাকা রাজস্ব পায়।
জেলা কৃষি অফিসার কবির হোসেন জানান, কক্সবাজার জেলা থেকে যে পরিমাণ সুপারি উৎপাদন হয়,সেখান থেকে দেশের বাইরে রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে যাচ্ছি। যে কোন চাষে কৃষকদের কারিগরী সহায়তার ও পরামর্শের জন্য আমাদের মাঠ পর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়োজিত আছেন।
তিনি আরো জানান, অনেক সচেতন সুপারি বাগান মালিক শুকনো মৌসুমে গাছে সার ও সেচ দিয়েছেন। এজন্য এবারে সর্বত্রই সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com