রাজধানীর সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় মায়ের কাছ থেকে গোপনে ভুল বুঝিয়ে ঘরে বসে স্বাক্ষর নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসের সহায়তায় অবৈধ ভাবে জমি দালানকোঠা হেবা দলিলের মাধ্যমে দখলে নিয়েছে আপন মেয়ে এবং জামাই। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মা রবিবার ২৮ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন-ক্র্যাব মিলনায়তনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বিধবা হোসনেয়ারা বেগম মেয়ে -জামাইয়ের নানা লোমহর্ষক বর্ননা দেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামী মোঃ সিরাজুল হক, গ্রামের বাড়ী মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা: ৪৩০/৪/এ, সেনপাড়া পর্বতা। স্বামী ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে এমএ পাশ করে বরহামগঞ্জ কলেজ শিবচরের ইংরেজির প্রফেসর ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে চাকুরীতে যোগদান করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকায় বদলী হলে আমাদের পরিবারের ২ মেয়ে ১ ছেলে ভরণ পোষনের জন্য ভাড়া বাসায় থেকে কষ্ট করে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। চাকুরীর পাশাপাশি ইংরেজি প্রাইভেট পড়িয়ে কিছু টাকা জমিয়ে ১৯৯০ সালে আমার নামে দলিল আড়াই কাঠা জমি ক্রয় করেন (যার নং-৭১৭৭ তাং- ২৫/০৯/৯০)। পরবর্তীতে একই জায়গায় ০৯/১০/৯৬ তারিখে এর সামনের অংশের আরো আড়াই কাঠা জমি দলিল নং-৭০২৯ মূলে ক্রয় করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর আমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। আমার মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার ঔষধে খরচ হয়।
ক্রয়কৃত জমিতে আমার স্বামী সিরাজুল হক ব্যাংক থেকে কর্মচারী নির্মাণ ঋণ গ্রহণ করে ঐ ৫ কাঠা জমিতে ৫ তলা বাড়ী নির্মাণ করেন। উক্ত বাড়ীতে আমরা বসবাসের পাশাপাশি ২ মেয়েকে তাদের বিবাহের পর থেকে থাকার সুযোগ দেই। উক্ত বাড়ীর ঋণ পরিশোধ করার পর আমরা ২৫/০৯/৯০ তারিখে দলিল নং-৭১৭৭ মূলে পূর্বে ক্রয়কৃত পিছনের অংশের আড়াই কাঠার অগ্রণী ব্যাংক থেকে পুনরায় ৭০,০০,০০০/- (সত্তর লক্ষ) টাকা ঋণ গ্রহন করি। স্বামীর পেনশন বাবদ জমাকৃত টাকা থেকে ৫৮,০০,০০০/- (আটান্ন লক্ষ) টাকা মোট ১,২৮,০০,০০০/- (এক কোটি আঠাশ লক্ষ) টাকা বিনিয়োগ করে নীচে গ্যারেজ সহ মোট ৬ তলা ভবন নির্মাণ করি। উক্ত বাড়ীতে প্রতি তলায় ২টি করে এবং ৪র্থ তলায় ১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হলে ছোট মেয়ে ৪র্থ তলার ফ্ল্যাটে বসবাসের বায়না ধরলে তাকে সেখানে থাকার সুযোগ দেয়া হয়।
২ মেয়ে তাদের বিয়ের পর থেকে আমাদের বাসায় বসবাস করলেও তারা বিনা ভাড়ায় থাকে। একমাত্র ছেলে তার সন্তানদের লেখা-পড়ার সুবিধার কারনে মোহাম্মদপুরে বসবাস করে। গত ১১/০৫/২০২৩ তারিখে আমার স্বামী মোঃ সিরাজুল হক মৃত্যুবরণ করায় আমি সম্পূর্ণরূপে ছেলে-মেয়েদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। ছোট মেয়ে তাবাচ্ছুম সুলতানা এসআইবিএল ব্যাংকে চাকুরী করায় এবং জামাই বেশ চতুর হওয়ায় বাড়ীর ভাড়া আদায় খাজনা প্রদান সহ যাবতীয় কাজ তাদের দিয়ে করি এবং তাদের সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে থাকি। এ সমস্ত কারনে বিভিন্ন সময় আমার স্বাক্ষর প্রয়োজন হলে বিভিন্ন সময়ে আমার নিকট থেকে নানা ধরনের কাগজে স্বাক্ষর করতে বললে আমি সরল বিশ্বাসে তাতে স্বাক্ষর করি।
গত ১০ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে আমি স্বামীর কবর জেয়ারতে গ্রামের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য মেয়ে ও জামাইকে গাড়ী দিতে বললে তারা তা দিতে অস্বীকার করে অথচ গাড়ীর মালিক আমার স্বামী। পরবর্তীতে স্বামীর নামের বন্দুক সকলে ছেলের নামে আনার জন্য লিখিত সম্মতি প্রদান করে। কিন্তু বিষয়টি থানা থেকে তদন্তে আসলে ছোট মেয়ে বন্দুক ছেলের নামে দিতে অস্বীকার করে ফলে তা আর করা যায়নি। প্রকৃত পক্ষে আমার ছোট মেয়ের জামাই একজন সন্ত্রাসী প্রকৃত অমানুষ। ২০০৭ সালে আমার ছোট ননদের রাজাবাজার বাসায় ঢুকে ৪/৫ জন সন্ত্রাসীসহ আমাদের সামনে ছেলেকে মেরে ফেলার লক্ষ্যে আক্রমন করে এঘটনায় তেজগাঁও থানায় ডায়েরী করা হয় (নং-৯৭৮/২০০৭)। তাদের এ ধরনের কাজে আমার ছেলের মনে সন্দেহ হলে সে মিরপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে তল্লাশি দিলে দেখতে পায় যে ছোট মেয়ে বর্তমানে যে ভবনে বসবাস করে উক্ত বাড়ীটি হেবার মাধ্যমে তার নামে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে (হেবা দলিল নং-৮৪৮৫ তারিখ: ১১/০৯/২৩)।
উল্লেখ্য, আমাকে কখনোই হেবা করে জমি বাড়ী ছোট মেয়ের নামে নেয়ার বিষয়টি জানানো হয়নি এবং কোন হেবার কাগজে আমি জেনে শুনে স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করিনি। দলিলটি সম্পূর্ণরূপে আমার অজ্ঞাতে জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে। দলিল সম্পাদনের পরবর্তী মাসেই সে তার নামে নামজারী করে নিয়েছে। বিষয়টি জানার পর আমি নিজে ভাইয়ের মেয়ে, ভাইয়ের মেয়ের জামাই ও ভাইয়ের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তাবাচ্ছুম সুলতানার বাসায় গিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে বিষয়টি কেন করা হয়েছে জানতে চাইলে সে এ ধরনের কোন কাজ করেনি এবং বিষয়টি দেখার জন্য তার কিছু সময় দরকার মর্মে জানায় (তার একটি অডিও রেকর্ড আমার কাছে আছে)। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার এ বিষয়ে আমাদের সকল আত্বীয় স্বজন একত্রে মিলিত হয়ে বিষয়টি মিমাংসার উদ্যোগ নিলেও তারা আপোষ করতে অস্বীকার করে এবং তারা মামলায় লড়ে যাবে মর্মে জানায়।
এদিকে উক্ত হেবা দলিল তঞ্চকতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে দলিল বাতিলের জন্য ঢাকার বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালতে (২৩/২৪ নম্বর) মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলায় মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে মূল বিবাদী ও অন্য ৫ জনকে মোকাবিল বিবাদী করা হয়েছে।
দলিল হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর মেয়েরা আমার দেখাশুনা বন্ধ করে দেয়। আমার পক্ষে জীবনধারন কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং মামলা চালানোর ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য তারা আমাকে যে কোন সময় হত্যা/খুন করতে পারে সন্দেহে আমি গত ১ রজমান থেকে ছেলের সাথে তার মোহাম্মদপুরের বাসায় বসবাস করছি। আমার মোহাম্মদপুর বসবাসের সুযোগে তারা এখন ২টি বাসার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছে এবং ভাড়াটিয়াদের নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে চলেছে যাতে তারা আমাকে ভাড়া না দিয়ে তাদের নিকট ভাড়া প্রদান করে।
উল্লেখ্য ২০২১ সালে নির্মিত বাড়ীটির লোনের জন্য অগ্রণী ব্যাংক, সেনপাড়া শাখায় বন্ধক দেয়া আছে। যার মঞ্জুরিপত্র (নং-মসঢাসা-১/ঢাউঅ/ফা-৮৯৮/ঋণ/৬০/২০২০ তারিখ ৫ নভেম্বর ২০২০) এর প্রেক্ষিতে আমি ব্যাংক বরাবরে বন্ধকী দলিল নং-৭৯৮৫ ও আমমোক্তার নামা দলিল ৭৮৮৬ তারিখ ০২/১২/২০ নিবন্ধন করি। এবং উক্ত ঋণের জন্য ২ মেয়ে ও ছেলে ঋণের গ্যারান্টার। সম্পত্তি ব্যাংক থেকে অবমুক্ত না করে কোনরূপ হেবাদান বিক্রয় আইনত নিষিদ্ধ জানা স্বত্বেও ছোট মেয়ে ব্যাংকে চাকুরী করার পর ও কিভাবে তা হেবা করে নিল তা প্রশ্নের উদ্যেগ করে। দেশের আইনে তার উপযুক্ত বিচার চেয়ে এবং উপস্থিত সাংবাদিক ভাই ও বোনদের সহযোগীতা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী বিধবা হোসনেয়ারা।###
Leave a Reply