বিনোদন ডেস্ক:৭১
শিল্পী সমিতিতে নিপুণের দাপটের পেছনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শেখ সেলিমের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছিল। সে সময় ভয়ে মুখ না খুললেও এবার প্রকাশ্যেই শিল্পী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনলেন সে সময় দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কমিশনাররা।
নিপুণের সঙ্গে শেখ সেলিমের পরিচয় কিভাবে?
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিম। জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বদলে যান নিপুণ। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার চলাফেরা বাড়তে থাকে। সেই সময়ই পরিচয়।
২০১২ সালে বনানীর অভিজাত এলাকায় নিপুণ গড়ে তোলেন নিজস্ব পারলার। সেটা উদ্বোধন করতে আসেন শেখ সেলিম। সেই থেকেই আলোচনায় আসেন নিপুণ। ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে নিপুণের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শিল্পী সমিতি নির্বাচনে নিপুণের পক্ষে প্রভাব খাটান কেন শেখ সেলিম?
শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ফলাফলের রাতটি ছিল নির্বাচন কমিশনারদের জন্য ভয়াবহ পরীক্ষার রাত। ফলাফল গণনার শুরু থেকেই একের পর এক হুমকি আসতে থাকে। পরিস্থিতি বেগতিক হয় ফলাফল ঘোষণার আগমুহূর্তে। কারণ, জায়েদ খানের চেয়ে ভোটে পিছিয়ে যান নিপুণ। তখন থেকেই একের পর এক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ভয়ভীতি দেখান।
সেই রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা পিরজাদা হারুন জানান, তিনি পাঁচবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচনে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা তাকে মানসিকভাবে এখনো আতঙ্কিত করে।
হারুন বলেন, নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন। তিনি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। তিনি নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি সরাসরি “না” বলে দিই।
তিনি আরও বলেন, এর আগে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন একবার উপজেলা নির্বাচনে ওই নেতার শ্যালকের জন্য আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিলেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানতেন যে আমাকে কেনা যাবে না। এ জন্য আমি বারবার সরকারি চাকরিতে পদবঞ্চিত হয়েছি।
পরবর্তী সময় মুঠোফোনে ভয়ও দেখানো হয়, এমনকি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয় উল্লেখ করে হারুন বলেন, তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। এখন যে আয়নাঘরের কথা শুনছি, তখন সে রকম কোনো আয়নাঘরের কথা শোনা থাকলে হয়তো সৎ থাকা সম্ভব হতো না। সেই রকম ভয় দেখানো হয়েছিল।
শিল্পী সমিতির সেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যুক্ত আরেকজন জানান, এমন আতঙ্ক হবে ভাবলে তিনি দায়িত্ব পালন করতেন না। কারণ, জীবনের হুমকি ছিল। যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, এমন শঙ্কা ছিল। সেগুলো ভয়ে তখন প্রকাশ করেননি। তারা বিষয়গুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপরই ছেড়ে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তার মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল।
নির্বাচনের পরে এই ঘটনা মামলায় গড়ায়। আদালত থেকে রায় নিয়ে শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসে নিপুণ। তিনি পুরো সময় দায়িত্ব পালন করেন। দুই বছর পর ২০২৪-২৬ সালের নির্বাচন হয় গত ১৯ এপ্রিল, সেই নির্বাচনে হেরে যান নিপুণ। সভাপতি পদে জয়ী হন মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ডিপজল। সেদিন রাতেই বিজয়ীদের ফুলের মালা দেন নিপুণ।
কিন্তু ২৫ দিন পরই মত পরিবর্তন করে নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পুরো কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নিপুণ। তবে বেশি সুবিধা করতে পারেননি।
Leave a Reply