বিশেষ প্রতিবেদক
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। দ্বীপটির আনাচে-কানাচেতে এমন সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, যেগুলো দেখতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কিন্তু দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই নানা সিদ্ধান্ত নেন। এসব সিদ্ধান্তের কারণে নির্ধারিত সময়ে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যেতে পারেনি। অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) থেকে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ হাজারের বেশি পর্যটক যাতায়াত করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে রাত্রিযাপনেও।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণ সংক্রান্ত গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও জাহাজ ছাড়ার পয়েন্ট নির্ধারণে কমিটির প্রথম বৈঠক মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে কমিটির সদস্যদের সাথে পরিবেশসহ সার্বিক বিষয়াদি পর্যালোচনার পর জাহাজ ছাড়া পয়েন্ট নির্ধারণে করা হয়েছে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএর ঘাট।’
‘তবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দ্বীপে ২ হাজারের বেশি পর্যটক যাতায়াত করতে পারবে না। এছাড়া নভেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে রাত্রিযাপনের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকরা দ্বীপে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।’ যোগ করেন ইউএনও নিলুফা।
এর আগে গত সোমবার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের একটি জাহাজকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য কেয়ারি সিন্দাবাদ আবেদন করেছিল। তারা সেই জাহাজকে যাচাই-বাছাই শেষে কক্সবাজার থেকে যাওয়ার জন্য অনুমতি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক অফিস আদেশে সেন্টমার্টিনের পর্যটন নিয়ন্ত্রণে কমিটি গঠন এবং একই সঙ্গে কক্সবাজার থেকে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপগামী জাহাজ চলাচল নিয়ে কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
ছয় সদস্যের কমিটিতে রয়েছেনু টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় অথবা ট্যুরিজম বোর্ডের কক্সবাজার প্রতিনিধি, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের কক্সবাজার প্রতিনিধি, কোস্টগার্ডের কক্সবাজার প্রতিনিধি, ট্যুরিস্ট পুলিশ-কক্সবাজারের প্রতিনিধি এবং পরিবেশ অধিদপ্তর-কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক।
কমিটির কর্মপরিধি হিসেবে বলা হয়েছে, সেন্টমার্টিনগামী জাহাজে ওঠার আগে পর্যটকদের জাহাজ ছাড়ার জায়গা, অর্থাৎ এন্ট্রি পয়েন্টে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের তৈরি করা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে ট্রাভেল পাস নিতে হবে।
ট্রাভেল পাসধারী পর্যটকদের অনুমোদিত জাহাজে ভ্রমণ নিশ্চিত করবে কমিটি। পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজে নিষিদ্ধঘোষিত পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিটি কঠোর থাকবে।
পর্যটকেরা সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌঁছার পর কোন হোটেলে থাকবেন, তা লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি রেজিস্টারে সংরক্ষণ করা হবে। জাহাজ ছাড়ার স্থানে (পয়েন্টে) ও সেন্টমার্টিনের প্রবেশের স্থানে (এন্ট্রি পয়েন্ট) পর্যটকদের জন্য করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়ে বিলবোর্ড স্থাপন করা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয় সার্বিক বিষয় ও যোগাযোগ সমন্বয় করবে। কাজের সুবিধার্থে কমিটি প্রয়োজনে সদস্য বাড়াতে পারবে।
এদিকে কাজের সুবিধার্থে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কমিটিতে নতুন করে পাঁচজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন সদস্যরা হলেন, দ্বীপে চলাচলকারী জাহাজ মালিক সমিতির সভাপতি, সেন্টমার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি, কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি এবং কক্সবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত এবং জাহাজ চলাচলের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে কক্সবাজার শহরে জাহাজ চলাচলের ঘাট নির্ধারণ করেছি। একই সাথে কাজের সুবিধার্থে কমিটিতে নতুন করে পাঁচজন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com