আমিরুল ইসলাম মো. রাশেদ, কক্সবাজার
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দরকেন্দ্রিক টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেডের কমিটি দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বহাল রয়েছে। উখিয়া-টেকনাফ থেকে বদি প্রথম এমপি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ২০০৯ সালে বন্দরের আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে তার আপন ভাই আবদুল আমিনকে সভাপতি ও এহতেশামুল হক বাহাদুরকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের এই কমিটি গঠন করা হয়। যা আজ পর্যন্ত বহাল রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালে আত্মস্বীকৃত মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণে এই কমিটির সভাপতি সাবেক এমপি বদির আপন ভাই আবদুল আমিন ১০২ জন শীর্ষ মাদক কারবারির সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেন। মাদক কারবারি হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার পরও তার সভাপতি পদ বহাল থাকে। ওই সময় দুই বছর জেল খেটে জামিনে বের হয়ে পুনরায় দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বন্দরে অ্যাসোসিয়েশনের নামে চাঁদাবাজি শুরু করেন তিনি। তিন বছর পরপর নির্বাচনের কথা থাকলেও ২০০৯-২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই ১৬ বছরে আর কোনো নির্বাচন হতে দেখা যায়নি। বদির আশীর্বাদে স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তার একান্ত আজ্ঞাবাহক একই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। মূলত আড়াল থেকে বদির নির্দেশে এই কমিটি পরিচালিত হয়। সংগঠনটির আমদানি-রফতানি স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় ও বন্দরের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলার অধিকার আছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নয় বরং বদির প্রয়োজন ও স্বার্থ রক্ষায় চলত এই কমিটি।
দীর্ঘ এই ১৬ বছরে কখনো আমদানি- রফতানিকারকদের স্বার্থে তাদেরকে একটি কথাও বলতে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে বছরের পর বছর এই বন্দর দিয়ে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়েছে যা নিয়ে তারা নীরব ছিল। তাদের মূল কাজ ছিল বন্দরকেন্দ্রিক বদির চাঁদাবাজি, রাজস্ব ফাঁকি, স্কেল-ওজন কারসাজি, শ্রমিক মাঝিদের স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন ধরনের অন্যায় অনিয়মে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করা।
বন্দরকেন্দ্রিক এক ব্যবসায়ী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ২০০৯ সালের আগে বন্দরে শ্রমিকদের একটি বকশিশের রেওয়াজ ছিল যা ট্রাকপ্রতি ৫০০ টাকা। সেই ৫০০ টাকা বর্তমানে ৭ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে এই চক্রটি। যা সরাসরি তাদের পকেটে চলে যায়। এ ছাড়াও বছরখানেক আগে এই বন্দরের একটি স্কেল-ওজন কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। গত ১৬ বছর ধরে ট্রাক স্কেলের ওজন কারাসাজির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনাটিও শতকোটি টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়ার কথা লোকমুখে শোনা যাচ্ছে। যেটি এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাহাদুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে। গত ১৬ বছর টেকনাফ স্থলবন্দর এই মাফিয়া চক্রের হাতে জিম্মি ছিল। এই মাফিয়া চক্রের প্রধান হোতা হচ্ছে ইয়াবা নিয়ে আলোচিত বিতর্কিত আবদুর রহমান বদি ও তার পরিবার এবং তাদের খুবই ঘনিষ্ঠরা, যার মধ্যে বাহাদুর উল্লেখযোগ্য।
যে বিশাল চাঁদাবাজি ও ওজন কারসাজির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা নীরবে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলে আসছে এই বিষয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কখনো বিন্দুমাত্র উচ্চবাচ্য করেনি বরং তারা নিজেরাও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর অংশীদার ছিল।
অ্যাসোসিয়েশনের নাম ভাঙিয়ে তারা আরও অনেক ধরনের চাঁদাবাজিতে জড়িত হয়ে পড়ে। তাদের মূল কাজ ছিল বন্দরকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজি, রাজস্ব ফাঁকির অনিয়ম কারসাজিতে মদদ দেওয়া। বর্তমানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই শতকোটি টাকার মালিক যা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আমদানিকারক বলেন, গত ১৬ বছরে এই বন্দর দিয়ে যত অবৈধ কর্মকাণ্ড হয়েছে তা এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসবে। তিনি আরও বলেন ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর দেশের সব জায়গায় পরিবর্তন হলেও টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক এই ফ্যাসিস্ট কমিটি এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। বদির ভাই সভাপতি আবদুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক কিছুটা আত্মগোপনে রয়েছে প্রকাশ্যে তেমন আসে না। তারা এখনও কীভাবে কমিটি ধরে রেখেছে সেটি রহস্যজনক।
বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীরা গত ১৬ বছরের দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তের জন্য একটি বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানান। এই কমিটি বাতিল করে অবিলম্বে নতুন কমিটি গঠনের দাবিও জানান তারা।
সাধারণ সম্পাদক বাহাদুরের ফোনে একাধিক বার কল করেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সভাপতি আবদুল আমিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সময়ের আলো
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com