ফারুকুর রাহমান, টেকনাফ।
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত ও আতঙ্কের আরেক ভয়াবহ নাম অপহরণ। নিত্য নতুন দিনে বেড়েই চলছে অপহরণ। তবেই এই অপহরণ বন্ধ করতে সেনাবাহিনীর অভিযান প্রয়োজন বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
দেখা গেছে, এক সময় সীমান্ত জনপদ ছিল ইয়াবার ঘাটি নামে পরিচিত। সেই ইয়াবার হাত ধরে এখন খুবই জনপ্রিয় উক্ত অপহরণ বাণিজ্য। কখনো অবুঝ শিশু, আবার কখনো কিশোর, কখনো বৃদ্ধা কেউ রেহাই পাচ্ছে না পাহাড়ি অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তদের হাত থেকে। র্দূগম পাহাড় ঘিরে কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে। যাদের সংখ্যা শতাধিক মতো। পাহাড়ে তৈরি করছে অপহরণ বাণিজ্যের আস্তানা। কিছু সংখ্যক স্থানীয়দের আশ্রয় প্রশ্রয়ে গড়ে উঠেছে অপরাধ স্থানীয়রা দাবি করেন।
পুলিশ তথ্য মতে, গত বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপহরণ মামলা রুজু করা হয়েছে ৬২টি এবং উদ্ধার করা হয়েছে নারী ও শিশুসহ ১৩৮ জনকে। পুলিশের নিয়মিত টহল বাড়িয়েছে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে। অপহরণকারীদের আটক করা হচ্ছে তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য শিগগিরই যৌথভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা যায়।
জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়ন পুরোটাই পাহাড় ঘেঁষে। টেকনাফ সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার কিছু এলাকায়ও পাহাড় রয়েছে। ফলে এই ৪টি ইউনিয়নের মানুষ এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় এবং আতঙ্কে রয়েছে। বিগত সরকারের সময় এই চক্রটিকে কতিপয় প্রভাবশালীর সখ্যতার অভিযোগ ছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে এসেও তা বন্ধ না হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েছে বহুগুণ। গত এক সপ্তাহে অপহরণ হয়েছে ৩০ জন। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টেকনাফের মানুষ মনে করেন সেনা বাহিনীর নেতৃত্বে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হলে এই ভয়াবহ অপরাধ রোধ করা সম্ভব। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।
বর্তমানে এই পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ তাই স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির থেকে বেড়ে উঠে অপহরণ চক্র। ওই রোহিঙ্গা ডাকাতদল অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্থানীয়দের পাহাড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবি করছে। যদি মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয়ে প্রাণ হারানোর ও সম্ভাবনা থাকে তাদের। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপহরণ বন্ধ না হলে স্থানীয়দের কঠিন পরিস্থিতিতে দিন পার করতে হবে বলে আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মনে। তাই তারা সেনাবাহিনী সহ সকল প্রশাসনকে একত্রে পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে।
তাঁরা আরো জানান, আমাদের টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। এবং নিত্য নতুন দিনে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত চলছে স্থানীয়দের মানববন্ধন। তাদের দুঃখ এত কিছুর পরেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন।
পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত হওয়া জসিম উদ্দিন বলেন, ৩০ ডিসেম্বর রাতে নিজের মুদির দোকান থেকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে আমাকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে গহিন পাহাড়ে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে প্রচুর মারধর করে নির্যাতন চালানো হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে মুক্তিপণের টাকার জন্য একের পর এক মারধর করা হয়। সর্বশেষ ৮ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে প্রাণে ফেরত দিয়েছে অপহরণকারীরা। মুক্তিপণের টাকার জন্য যেভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন রয়েছে। বাড়ি ফিরে দুই দিন চিকিৎসা চালানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, অপহরণের ব্যাপারে আগস্টের পর থেকে উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা সভায় জুড়ালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা না করলে এই অপহরণ বন্ধ হবে না। অপহরণের সাথে বেশিরভাগ জড়িত রোহিঙ্গারা পাশাপাশি কিছু স্থানীয়রাও জড়িত থাকতে পারে। এসব অপহরণের সাথে কারা জড়িত সেটি প্রশাসন চাইলে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, অপহরণসহ যে কোনো ধরনের অপরাধ দমনে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অপহরণের ঘটনাগুলো কোন কোন পয়েন্টে হয় সেটি নির্ধারণ করে সেখানে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সবাই এক সঙ্গে কাজ করলে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে।
উল্লেখ্য, ৩০ ডিসেম্বর সকালে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুড়া সংলগ্ন পশ্চিমে বনবিভাগের পাহাড়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ২১ জন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় অপহরণের শিকার হয়। তার মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা পালিয়ে আসে। ৩১ ডিসেম্বর ৪৮ ঘণ্টা পাহাড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে হ্নীলার জাদিমুড়া ও জুম্মাপাড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করেছে র্যাব-১৫।
উপদেষ্টা সম্পাদক : জহির আহমদ, টেকনাফ উপজেলা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
অফিস : আবু সিদ্দিক মার্কেট, টেকনাফ, কক্সবাজার।
মোবাইল : ০১৯০৭-৭৫৮২৫০, ০১৮৫১-৯২৯৬৫৮
Developed By : AzadWebIT.Com