অনলাইন ডেস্ক:::
সম্মেলনে ডেলিগেট কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে মহানগর, জেলা ও উপজেলায় নেতৃত্ব নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এই চর্চা অব্যাহত রাখার পক্ষেও হাইকমান্ড। সেই লক্ষ্যেই এবার নয়া ফরম্যাটে পেশাজীবী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠনে কাজ করছেন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের মধ্যে অন্যতম বড় সংগঠন হচ্ছে চিকিৎসকদের নিয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। এবার সম্মেলনের মাধ্যমে ড্যাবের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে চার সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপিপন্থি প্রকৌশলীদের বড় পেশাজীবী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এবং কৃষিবিদদের সংগঠন অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে জোরেশোরে। তবে সংগঠনগুলোর বেশির ভাগ নেতা-কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের পক্ষে। তাদের মতে, সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্য এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছেন তাদের মূল্যায়ন করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ড্যাব ও এ্যাবের সম্মেলনের দিনক্ষণ বা আহ্বায়ক কমিটি গঠনের বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একাধিক বৈঠক করেছেন। খুব দ্রুতই এ্যাব ও অ্যাবের কাউন্সিলের দিনক্ষণ বা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এ্যাবসহ প্রতিটি পেশাজীবী সংগঠনের আলাদা এবং একটি সমন্বিত থিংকট্যাংক গঠনের চিন্তা বিএনপির। মূলত রাষ্ট্র মেরামত ও ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রত্যেকটি খাতের জন্য এই থিংকট্যাংক কাজ করবে।
গত ৪ মার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) ও অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (অ্যাব) এবং ২৪ মার্চ ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে বিলুপ্ত করা হয়। মূলত দল গোছানোর পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনগুলোকেও আরও শক্তিশালী করতে চায় বিএনপি। সে জন্য তিন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব নতুনভাবে নির্বাচনের ভাবনা হাইকমান্ডের।
৩০ দিনের মধ্যে ড্যাবের কাউন্সিল, নির্বাচন কমিশন গঠন
ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ এবং মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালামের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত করা হয় গত ২৪ মার্চ। ওই দিনই ১২ সদস্যর একটি সম্মেলন প্রস্তুতি ও কাউন্সিল পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে ড্যাবের কাউন্সিল সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে কমিটির সদস্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকারকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যরা হলেন সদস্যসচিব অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সদস্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও অধ্যাপক মামুন আহমেদ।
জানা গেছে, এই কমিটি ৩০ দিনের মধ্যেই সম্মেলন সম্পন্ন করবে। ড্যাবের সম্মেলন সফল হলে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য পেশাজীবী এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের কমিটিও সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হবে। ড্যাব সংগঠনে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার সদস্য (ভোটার) রয়েছেন। নতুনভাবে কাউকে ভোটার না বানিয়ে আগের সদস্যদের নিয়েই কাউন্সিল করার দাবি ড্যাব নেতাদের।
ড্যাবের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ বলেন, ‘সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করলে গণতান্ত্রিক চর্চা বিকশিত ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। কেননা, কাউন্সিলে প্রকৃত নেতাদের মূল্যায়নের সুযোগ থাকে। জয়ী এবং পরাজিত প্যানেলের লোকজন মিলেমিশে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা যায়। এই চর্চা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে সর্বত্র অব্যাহত রাখলে দলের লাভ হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির দুঃসময়ে আমরা চিকিৎসকদের সরাসরি ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে ড্যাবের দায়িত্ব গ্রহণ করি। যে সময় মহামারি করোনায় বিশ্ব বিপর্যস্ত ছিল, সে সময় দায়িত্ব নিয়েই আমরা দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি করোনাভাইরাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মাঠে নিরলসভাবে সক্রিয় ছিলাম। নেতা-কর্মীরা সেসবের মূল্যায়ন করবেন, ইনশাআল্লাহ।’
ড্যাবের প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিজন কান্তি সরকার বলেন, ‘আগামী ৯ মে পর্যন্ত কাউন্সিল করার সময় রয়েছে। আশা করছি, এই সময়ের মধ্যেই ভালো কিছু করা হবে। দল ও সংগঠনের জন্য যেটি ভালো তারা সেটিই করবেন।’
ড্যাবের নতুন কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় থাকা ১৪ জন নেতা ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন এবং বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেদের ভূমিকা সম্পর্কে অবহিত করছেন। এরা হলেন সাবেক সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশীদ, সাবেক মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন ও ডা. নজরুল ইসলাম, ড্যাবের উপদেষ্টা ডা. রফিকুল কবির লাবু, সহসভাপতি ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন ও সাইফুদ্দিন নিসার আহমেদ তুষান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মো. মেহেদী হাসান, যুগ্ম মহাসচিব ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. শাকুর খান প্রমুখ। তবে প্যানেল গঠনের সম্ভাবনাও রয়েছে।
অবশ্য ড্যাবের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ডা. মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নির্বাচনে প্যানেলভিত্তিক না করে বরং প্রধান পাঁচটি পদে ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। তিনি সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ড্যাবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের কাছে সব সদস্যের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ড্যাবের প্রধান পাঁচটি পদে নির্বাচন ব্যবস্থায় একটা সুপারিশ বিবেচনার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানান। ডা. ফখরুজ্জামানের মতে, এতে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব কমানো সম্ভব। কারণ প্যানেলভিত্তিক নির্বাচনে বিজয়ী প্যানেল এবং পরাজিত প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন বিভাজন তৈরি হয় এবং তা পরবর্তী সময়ে কর্মসূচিতে প্রভাব ফেলে।
২০১৯ সালের ২৪ মে কাউন্সিলরদের ভোটে হারুন-সালামের নেতৃত্বধীন কমিটি বিগত আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে ভূমিকা রেখেছে। দলীয় কর্মসূচির বাইরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রান্তিক মানুষের মাঝে ড্যাবের উদ্যোগে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, ত্রাণ এবং ওষুধ বিতরণ করেছে।
এ্যাবের নতুন কমিটি শিগগরিই, থাকবে থিংকট্যাংক
কাউন্সিলদের ভোটে নির্বাচিত ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু এবং মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হাছিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করা হয় গত ৪ মার্চ। গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এ্যাবের সাধারণ সদস্য ১ হাজার ৩০০ জন। সম্মেলনের মাধ্যমে নাকি সরাসরি আহ্বায়ক কমিটি হবে এ নিয়েই আলোচনা চলছে। আহ্বায়ক কমিটি দিলে প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুলকে আহ্বায়ক করে ৭১-৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হতে পারে। তবে বিগত কমিটির একজন নেতাকে নিয়ে হাইকমান্ডের আপত্তি থাকায় কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করতে হলে নতুন সদস্য দেওয়ার দরকার নাই। রাজপথের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মেধাবীদের সমন্বয়ে কমিটি হবে। তবে বয়স্ক এবং অতীতে যারা নেতৃত্বে ছিলেন এমন কাউকে আবারও নেতৃত্বে আনলে সংগঠন পিছিয়ে পড়বে।
সম্মেলন না হলে এবারও নতুন কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক মহাসচিব প্রকৌশলী আলমগীর হাছিন আহমেদ, সিনিয়র সহসভাপতি প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, সহসভাপতি প্রকৌশলী মো. মোস্তফা-ই জামান সেলিম, আইইবির ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন তালুকদার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী এ কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নু ও প্রকৌশলী মাহবুব আলম।
জানা যায়, বিএনপির ৩১ দফা রূপরেখা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ্যাবের নেতৃত্বে নতুন থিংকট্যাংক গঠন করা হবে। এ বিষয়ে এ্যাবের নতুন কমিটি কাজ করবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। মূলত পাওয়ার, ওয়েস্ট এনার্জি, পাওয়ার সেভিং, রিনিউঅ্যাবেল এনার্জিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত হবে এ্যাবের থিংকট্যাংক।
এ বিষয়ে প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা বাস্তবায়নে ইঞ্জিনিয়ারিং থিংকট্যাংক গঠন করা অত্যন্ত জরুরি, যা দেশবাসীকে নতুন আশার আলো দেখাবে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিস্তারিত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন তালুকদার জানান, তিনি ১৯৯০ সাল থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় আছেন। বিএনপির হাইকমান্ড যখন যেখানে দায়িত্ব দেবেন তিনি সে জন্য প্রস্তুত।
কৃষিবিদ অ্যাবের কমিটি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ
অ্যাগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (অ্যাব) আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয় ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। তিন মাসের কমিটি সাত বছরের সম্মেলনের আয়োজন করতে না পারায় প্রাণচাঞ্চল্য হারায় সংগঠনটি। গত ৪ মার্চ ওই কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাবকে আরও শক্তিশালী করতে তরুণ, দক্ষ ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে কমিটি করার দাবি তৃণমূলের।
জানা গেছে, অ্যাবের নতুন কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন কৃষিবিদ শফিউল আলম দিদার, মো. এমদাদুল হক দুলু, আকিকুল ইসলাম আকিক, এ কে এম আনিসুজ্জামান আনিছ, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, শাহাদাত হোসেন চঞ্চল, খন্দকার আরিফ, শফিকুল ইসলাম শফিক, রফিকুল ইসলাম খান ডন, ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মো. সোহরাব হোসেন সুজন, কৃষিবিদ শফিকুর রহমান নোবেলসহ কয়েকজন।
Leave a Reply