নাছির উদ্দীন টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
কক্সবাজার টেকনাফের হ্নীলা মৌলভীবাজারে
বিজিবির গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসা নেওয়া জেলেদের খুঁজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তায় দিলেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফ থেকে নির্বাচি সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও সংসদের হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। বুধবার (১১ জুন) দুপুরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আহত জেলেদের দেখতে যান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সদস্য এডঃ আব্দুল মান্নান, টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এডঃ হাসান সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন ও সাংগঠনিক সম্পাদক এডঃ সেলিমুল মুস্তাফা, অর্থ সম্পাদক সোহেল চৌধুরি, বিএনপি নেতা জিয়া, ছাত্রদলের সভাপতি হারুন রশিদ সহ অনেকেই।
গত ৯ জুন টেকনাফের হ্নীলা মৌলভীবাজার এলাকার বাসীন্দ জেলে কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম (৪০) কে আটক করেন উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি)’র সদস্যরা। পরে খবর পেয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিতে অপরাপর জেলেরা হ্নীলা মৌলভীবাজার চৌরাস্তার মোরে নৌকা দিয়ে ও টায়ার জ্বালিয়ে টেকনাফ – কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। যাতে প্রায় ৪ ঘন্টা দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে খবর পেয়ে বিজিবির সদস্যরা এসে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অবরোধ কারিদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বললে, দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে সংঘর্ষ হয়। এমন পরিস্থিতিতে কিছু উত্তেজিত জনতা বিজিবি সদস্য ও গাড়ির উপর হামলা করলে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি সম্পদ, জান এবং মাল রক্ষার্থে তারা গুলি ছুড়েন । যাতে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন জেলে সহ সাধারণ মানুষ আহত হয়। যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসা দিন রয়েছে বলে জানাগেছে। তবে বিজিবির এক সংবাদ বিঙপ্তির মাধ্যমে উখিয়া ব্যাটালিয়ন ( ৬৪ বিজিবির) অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত আসামীর আত্মীয়-স্বজন, মানব পাচারকারী, চোরাকারবারি, জেলে এবং স্থানীয় লোকজন হ্নীলা ইউনিয়ন মৌলভী বাজার এলাকায় চৌরাস্তায় টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও নৌকা দিয়ে রাস্তা ব্লক করে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এবং সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার চেষ্টা করে। এ প্রেক্ষিতে, বিওপি’র নিরাপত্তার স্বার্থে উখিয়া ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়কের নেতৃত্বে ৩টি গাড়ি যোগে ২০ জন বিজিবি সদস্য প্রাধিকার অনুযায়ী অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে ওই এলাকা অতিক্রম করে উক্ত বিওপিকে সহায়তা প্রদানের জন্য গমন করলে উত্তেজিত জনতা বিজিবি সদস্যদের উপর দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, লাঠি ও ইট পাটকেল ছুরে হামলা করে এবং বিজিবি’র গাড়ি ভাংচুর করে। এছাড়া বিজিবি সদস্যদের নিকট থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এমতাঅবস্থায়, আত্মরক্ষার্থে, সরকারি সম্পত্তি ও সাধারণ জনসাধানের জান-মাল রক্ষার্থে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি সদস্যরা ফাঁকা ফায়ার করে।
উক্ত হামলায় উখিয়া ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়কসহ ১০ জন বিজিবি সদস্য আহত হয়। পরবর্তীতে আহত বিজিবি সদস্যদের উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক কর্তৃক এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান মোঃ আলী জানান, জেলে জাহাঙ্গীর কে আটকের খবরে অপরাপর জেলেরা তাকে ছাড়িয়ে নিতে সড়ক অবরোধ করেছে শুনে ঘটনা স্থলে গিয়ে জনগণ কে বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। তবে বিজিবি ও স্থানীয় জেলেদের সাথে হওয়া ঘটনা অনভিপ্রেত বা কামনা ছিলনা। দাবি থাকবে বিজিবি যে মামলা করেছে সেখানে যদি কোন নিরপরাধ মানুষ থাকেন তদন্ত সাপেক্ষে বাদ দেওয়ায় অনুরোধ জানাচ্ছি।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফ থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন, গুলা গুলিটা না হলে ভাল হত, সরকারি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ধর্য্য ধরলে আমি খুশি হতাম। কিন্তুু ধর্য্যের বাহিরে গিয়া তারা কেন গুলা গুলি করেছে। অনেক ক্ষতি হয়েগেছে মানুষের। তাদের কে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা দিতে আসছিলাম। চিকিৎসা জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি । উন্নত চিকিৎসার জন্য একজন কে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছে তাকেউ আমরা সাহায্য করেছি।
তিনি আরো বলেন, গুলিও করেছেন তারা আহত হয়েছে মানুষ, মামলাটাও তারা ( বিজিবি) দিলেন। কি হয়েছে আমি জানিনা। আইনের ম্যারপেচ ওখানে কি আছে। ওই মামলায় কিছু নিরীহ মানুষ কে জড়ানো হয়েছে বলে জানাগেছে যারা ঘটনায় ছিলনা। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হয়ত বিজিবি কে কেউ কান কথা বলায় এভাবে মামলা হয়েছে। এটি পুলিশকে তদন্ত করে দেখার আহব্বান জানায় ।
জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা যেখানে নাফ নদীতে মাছ শিকার করে তাদের রুটি – রোজির জোগাড় করেন, সেখালে বাঁধা না দিয়ে মাছ শিকারের অনুমতি দিতে সংশ্লিষ্টদের আহব্বান করছি।
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে হ্নীলা বিওপির টহলদল কর্তৃক বিশেষ অভিযান পরিচালনার সময় মানব পাচারকারী ও মাদক চোরাকারবারী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) কর্তৃক সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে আনুমানিক ৪০/৫০ জন সিভিল সদস্য বিজিবির টহল দলের অপারেশনাল কর্মকান্ড পরিচালনায় বাঁধা প্রদান করে। এমনকি জাহাঙ্গীর আলম তার নেতৃত্বে লোকজন জড়ো করে বেআইনীভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে বিজিবি টহল দলের উপর অতর্কিত হামলা করে। পরবর্তীতে বিজিবি কর্তৃক জাহাঙ্গীর আলম ও তার ১৫ জন অনুসারীসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০-৩০ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।এর পরে রাস্তায় সংঘটিত ঘটনার জন্য ৭৭ জন কে আসামি ও ১০০০/১৫০০ জন অজ্ঞাত হয়ে কি আরেকটি মামলা হয়।
Leave a Reply