1. akfilmmultimedia@gmail.com : admin2020 :
  2. teknafchannel71@gmail.com : teknaf7120 :
বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

দুই কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কাউন্সিলর একরামের স্ত্রীর একমাত্র চাওয়া হত্যাকারীদের বিচার

  • আপডেট সময় : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

দুই কন্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন কাউন্সিলর একরামের স্ত্রীর একমাত্র চাওয়া হত্যাকারীদের বিচার

‘আব্বু, তুমি কান্না করতেছো যে…?’ বাবার মৃত্যুর আগ মুহূর্তে শিশুকন্যার এমন আকুল গলার স্বর আলোচনার জন্ম দিয়েছিল সারাদেশে।
১৪ মিনিটের সেই অডিও কলটি শেষ হয় গুলির শব্দে। সেই শব্দের সঙ্গে শেষ হয়ে যায় হাস্যোজ্জ্বল একটি পরিবারের ভবিষ্যৎ।

২০১৮ সালের ২৬ মে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর একরামুল হককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরদিন মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে উদ্ধার করা হয় তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ।
সে সময় র‍্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের কাছে দাবি করা হয় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত একরাম একজন ‘শীর্ষ মাদক কারবারি’। কিন্তু পরিবার দাবি করে একরামকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

পতিত সরকারের আমলে নির্মম ও বিচার বহির্ভূত হিসেবে আলোচিত হত্যাকাণ্ডের শিকার একরাম ও তার দুই কন্যার হাস্যোজ্জ্বল একটি চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ‘৩৬ জুলাই উদযাপন’- এর ড্রোন প্রদর্শনীতে।
চিত্র ফুটিয়ে তোলার পর আকাশে ভেসে ওঠে ড্রোন দিয়ে লেখা- ‘আব্বু, তুমি কান্না করতেছো যে’ বলে কাঁদছে না কোনো একরামের কন্যা।‘

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে ‘ডু ইউ মিস মি?’ শিরোনামে হাজারো ড্রোন ব্যবহার করে আয়োজিত এই প্রদর্শনী রাজধানী ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়।

টেকনাফ পৌর শহরের কায়ুকখালী এলাকার জীর্ণ-শীর্ণ দোতলা বাড়িতে স্বামীকে অকালে হারিয়ে দুই কন্যা তাহিয়াত হক ও নাহিয়ান হকসহ কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছেন একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম।

আওয়ামী লীগের আমলে সে ঘটনার ছয় বছরেও কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে ৫ আগস্ট হাসিনার পতনের পর ১৪ অক্টোবর গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একরাম হত্যার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা গ্রহণ করেছে।

এই ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সহ আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গুম, খুন, গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম চলছে।
সর্বশেষ গত ২০ জুলাই, একরাম হত্যাকাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (কক্সবাজার-৪) আবদুর রহমান বদিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ বদিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে দেন।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানির সময় প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘একরামুল হককে মোবাইলে কথা বলার সময় র‍্যাব সদস্যরা গুলি মেরে হত্যা করে। এটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’
গত বছরের ২০ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়া ‘মাদকের গডফাদার’ হিসেবে কুখ্যাত বদি ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় সেদিন হাজির ছিলেন।

অবশেষে বিচার কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্বজন হারানো একরামের পরিবার ও এলাকাবাসীকে কিছুটা হলেও স্বস্তি জুগিয়েছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) কথা হলে একরামের স্ত্রী আয়েশা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামীর কোনো অপরাধ ছিল না তবুও তাকে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।

একরাম ১২ বছর ধরে টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা নিজের কর্মীর প্রতি অবিচার করেছেন উল্লেখ করে আয়েশা বলেন, তিনি সব জেনেও চুপ ছিলেন উল্টো তার দুই মন্ত্রী দিয়ে (ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) চাপ প্রয়োগ করেছেন। কোনোভাবেই পূর্বপরিকল্পিত এ ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না হাসিনা।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে যাবেন জানিয়ে আয়েশা বলেন, যতদিন বেঁচে আছি আমার একটাই দাবী বিচার। এখন যেহেতু মামলা চলছে আশা করছি দ্রুতই ন্যায় বিচার পাবো, এতে করে একরামের আত্মা শান্তি পাবে।

স্নাতক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যায়নরত দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টের জীবন অতিবাহিত করা আয়েশা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, সরকারের কাছে স্বামী হত্যার বিচারই আমার প্রথম চাওয়া। তবে এই দুঃসহ জীবনে মেয়েগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা হয়। আশা করি পিতৃহারা আমার মেয়েগুলোর উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সরকার পাশে থাকবে।

একরামের মৃত্যুর পর টেকনাফ থানায় তিনটি মামলা করে র‍্যাব। টেকনাফ থানার তৎকালীন ও প্রদীপ কুমার দাশ (মেজর অব. সিনহা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত) সে সময় বলছিলেন, র‍্যাবের করা মামলার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে, তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাবে না। একটি মামলা থাকা অবস্থায় আরেকটি মামলা হয় না।

মরদেহ উদ্ধারের স্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা ও দুটি বন্দুক উদ্ধার করা হয় বলে সেসময় র‍্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

উল্লেখযোগ্য, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে একরাম হত্যাকাণ্ডকে বিচারবহির্ভূত উল্লেখ করে ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে সাতজন র‍্যাব কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞা আরোপিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন র‍্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ (অবসরপ্রাপ্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক) ও র‌্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো খবর
error: Content is protected !!