
নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের টেকনাফে জনগুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে পৃথক দুটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে টেকনাফ উপজেলার ছাত্র প্রতিনিধিরা।
আজ সোমবার (০৮ ডিসেম্বর) টেকনাফ পৌর প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এসব দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপিতে টেকনাফ পৌরসভার দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নির্বাচনী নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
পৌর অবকাঠামো উন্নয়নে ৬ দফা দাবি
টেকনাফ পৌর প্রশাসক বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, পৌরসভার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবকাঠামোগত জরাজীর্ণ অবস্থা জনগণ ও শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে। এমজিএসপি (MGSP), জাইকা (JICA), এডিবি (ADB) ও বিশ্বব্যাংকের বাজেটের আওতায় দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তারা ৬টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন:
১. ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ সংস্কার: লামার বাজারমুখী কায়ুকখালী ব্রিজটি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ভগ্নদশায় রয়েছে। বড় কোনো দুর্ঘটনা এড়াতে এখানে দ্রুত নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানানো হয়।
২. ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন: জালিয়া পাড়া বড় মাদ্রাসা রোড, কে.কে পাড়া মসজিদ রোড এবং বার্মিজ স্কুল এলাকার ড্রেনে স্ল্যাব নির্মাণের অনুরোধ করা হয়। বিশেষ করে ২নং ওয়ার্ডের কায়ুকখালী পাড়া স্টেশন থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত ৩৪০০ পরিবারের ব্যবহৃত প্রধান ড্রেনটি পুনর্নির্মাণ ও স্ল্যাব দিয়ে ঢাকার দাবি জানানো হয়।
৩. সিসিটিভি স্থাপন: পৌরসভার নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতে পৌর ভবন ও প্রধান ফটকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করা হয়।
৪. সোলার স্ট্রিট লাইট: ৪নং ওয়ার্ডের ইসলামাবাদ সাইফ প্লাজা এলাকা এবং কায়ুকখালী পাড়ার বিভিন্ন পয়েন্টে (প্রায় ১৫০-২০০ পরিবারের সুবিধার্থে) সোলার লাইট স্থাপনের দাবি করা হয়।
৫. আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পৌরসভার মূল ফটকের সামনে আধুনিক ‘সেমি-আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়েস্ট কন্টেইনার’ বসানোর আহ্বান জানানো হয়।
নির্বাচনী নিরাপত্তা ও রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণে ৫ দফা প্রস্তাব
অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়। এতে মানবপাচার, মাদক ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ৫টি বিশেষ প্রস্তাবনা দেওয়া হয়:
১. চেকপোস্ট আধুনিকায়ন: টেকনাফ-কক্সবাজারমুখী সকল চেকপোস্টে উন্নত স্ক্যানিং সিস্টেম চালুর দাবি জানানো হয়, যাতে কোনো অপরাধী বা অবৈধ চালান ধরা পড়ে।
২. রোহিঙ্গা নিয়ন্ত্রণ: রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা বন্ধ করে কাঁটাতারের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখা এবং ক্যাম্পের বাইরে থাকা রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে দ্রুত ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়।
৩. যানবাহন মনিটরিং: টমটম চালকদের বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের আওতায় আনা এবং রোহিঙ্গা চালকদের টমটম চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।
৪. অপরাধ দমন: মানবপাচার, মাদকপাচার ও অপহরণ রোধে কঠোর নজরদারি ও নিয়মিত অভিযান পরিচালনার অনুরোধ করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদান শেষে ছাত্র প্রতিনিধিরা জানান, টেকনাফের সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব এবং একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যেই তাদের এই উদ্যোগ। তারা প্রশাসনের কাছে বিষয়গুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য জোর দাবি জানান।
Leave a Reply