প্রধান উপদেষ্টার সমীপে টেকনাফের এনসিপি ও স্থানীয় অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক সায়েম সিকদার লিখেছেন…
আসসালামু আলাইকুম
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা!আপনার কাছে আজকের এই চিঠি লিখতে হবে, আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর জনগণের সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনসাধারণের মনে জায়গা করে নিবেন, সেটাই ছিল আমাদের প্রত্যাশা ।
আমি কায়মনোবাক্যে কামনা করি, আর কাউকে যেন এ ধরণের চিঠি না লিখতে হয়।তবু অসহায় হয়ে চরম ব্যথিত হৃদয়ে এ চিঠি লিখতে বসেছি, কারণ আজকের এ অসহায়ত্বের দিনে আপনিই পারেন আমাদের সম্বল হয়ে দাঁড়াতে,সহায় হয়ে পাশে থাকতে । কিন্তু আমি জানি না, এ চিঠি আপনার কাছে পৌঁছাবে কি-না।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আপনি একটু খোঁজ করলেই জানতে পারবেন,আমরা টেকনাফের মানুষ আজ কতটা অসহায়! বাংলাদেশের বুকে টেকনাফ যেন আরেকটি রাজ্য। চুতুর্থদিকে টেকনাফের মানুষের আয়ের পথ বন্ধ। জেলেরা পারে না নাফ নদীতে মাছ ধরতে, চাষিরা পারে না পাহাড়ের পাদদেশের জমিতে চাষাবাদ করতে,বন্দরে নেই স্থানীয় শ্রমিকের স্থান। প্রায় কর্মস্থল বলতে গেলে রোহিঙ্গাদের দখলে। এমতাবস্থায় টেকনাফের মানুষ দু’মুঠো ভাত যোগাতে হিমশিম খাচ্ছে। তবুও দুঃখ-দুর্দশার মধ্যদিয়ে পেটের দায়ে কোনোমতে জীবন যাপন করেই যাচ্ছে টেকনাফের মানুষ। কিন্তু এরই মধ্যে টেকনাফের মানুষের উপর নেমে এসেছে “মরার উপর খাঁড়ার ঘা “! তা হচ্ছে টেকনাফের মানুষের উপর চলছে অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য! মুক্তিপণ বাণিজ্যের কারণে টেকনাফের মানুষ একপ্রকার অনিরাপদ জীবন যাপন করছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকে টেকনাফে মুক্তিপণ বাণিজ্য শুরু হয়েছে। দিনদিন বেড়েই চলছে অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য। বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে শিক্ষক,কৃষক,চিকিৎসক,খেটে খাওয়া মানুষসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অপহরণ ও মুক্তিপণ বাণিজ্য থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা!
যেখানে মানুষের নেই কোনো আয়ের উৎস,সেখানে অপহরণের শিকার হলেই দিতে হয় লাখ লাখ টাকার মুক্তিপণ। এ টাকা কোথায় পাবে টেকনাফের মানুষ? এসব দুঃখ বোঝবার এবং দেখবার যেন কেউ নেই এই টেকনাফে। টেকনাফের মানুষ বাঁচতে চায় এ মহান বিপদ থেকে। বানের পানির ঢলে ভেসে যাওয়া মানুষ যেমন খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করে,ঠিক তেমনি টেকনাফের মানুষগুলোও খড়কুটো ধরতে চায় অপহরণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে ।
বিশেষ করে যে-সব রোহিঙ্গা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বাসায় ভাড়াটে হিসেবে থাকে, তাদেরকে অতি শীঘ্রই ক্যাম্পে ফেরত পাঠাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ সংগঠিত করে কিছু অতিলোভী স্থানীয়দের ভাড়াবাসায় আশ্রয় গ্রহণ করে এসব অপরাধীরা । যেভাবেই হোক,সব রোহিঙ্গাদের কাঁটাতারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। রোহিঙ্গারা স্থানীয়দের বাসাবাড়িতে আশ্রয়ে থাকতে পারলে, টেকনাফে খুনখারাবির মতো অপরাধপ্রবণতা দ্বিগুণ বেড়েই যাবে। সম্প্রতি টেকনাফ পৌরসভার কায়ুকখালী পাড়ায় এক রোহিঙ্গা ভাড়াটিয়া কর্তৃক স্থানীয় যুবককে খুন করার অভিযোগ রয়েছে । এতেই প্রমাণিত হয় রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাহিরে থাকলেই দ্রুতব্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে কিঞ্চিৎ পরিমাণও দ্বিধাবোধ করবে না।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা!দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমরা ভাতের বদলে আলু খেতে রাজি আছি, পেট চেপে ক্ষুধা ভুলতে রাজি আছি, যাতায়াত ভাড়া এক লাফে দ্বিগুণ হলেও পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিতে রাজি আছি; কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে অপহরণকারীদের হাত থেকে মুক্তি চাই। এটাই টেকনাফবাসীর প্রাণের দাবি।
সর্বশেষ এটাই চাই যে,এই অপহরণের সমস্যা সমাধানের একমাত্র পন্থা অস্থায়ী সেনাঘাঁটি স্থাপন করে রোহিঙ্গাদেরকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
হাজার হাজার মানুষের আয়ের উৎস নাফ নদীর বাকী অংশ খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।প্রান্তিক লবণ চাষিদেরকে ন্যায্য মূল্য পাওয়ার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয়দের জন্য ২৫%চাকুরি ও হোস্ট কমিউনিটির জন্য ২৫% বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিনীত অনুরোধ রইল।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা!আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, একটা কিছু করুন। অপহরণকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনুন। যেভাবেই হোক,স্থায়ী সমাধান করুন। অপরাধীদেরকে এভাবে ছেড়ে দিবেন না, ছেড়ে দেয়া যায় না। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থা এতটা অকার্যকর বা ভঙ্গুর হয়ে যায়নি; অপরাধী যতই ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী আর বিত্তবান হোক না কেন, তার দুঃসাহস আর ক্ষমতার দম্ভ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবার ক্ষমতা ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের আছে।
সায়েম সিকদার, সংগঠক
জাতীয় নাগরিক পার্টি(এনসিপি),টেকনাফ
ও স্থানীয় অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ,টেকনাফ।
Leave a Reply