মোহাম্মদ শহীদ, উখিয়া
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরীর বিদায় সংবর্ধনা সম্পন্ন হয়েছে।বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টায় উখিয়া উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উখিয়া আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সংবর্ধণা অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ হামিদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী যে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি সব সময় কার্টেসী মেইনটেইন করে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁকে পছন্দ করুক বা নাই করুক দায়িত্ব পালনকালে কোন মানুষকে তাঁর দরবার থেকে মলিন চেহেরায় বের হতে হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর আমরা একটি ছন্নছাড়া পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর একটি ভালো স্টেজে নিয়ে গেছেন। জানিনা সামনে কি অপেক্ষা করছে। এই মুহুর্তে ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য বিলেত যাচ্ছেন। সিভিল সার্ভিসে তাঁর কর্মদক্ষতা আরো আলোকিত হউক সেই প্রত্যাশা করছি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আকতার বলেছেন, ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন আপামর জনগণের কল্যাণে অনেক পরিশ্রম করেছেন। যে কোন প্রয়োজনে উনাকে ফোন করার সাথে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। সাংসদ শাহীন বলেন, বদলী জনিত সরকারি চাকরিতে এক জায়গায় কেউ স্থায়ীভাবে চাকরি করতে পারে না। তবে বিদায় দেওয়া অনেক কষ্টের। তবুও বিদায় দিতে হয়। আশা করি আপনার মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে সর্বোচ্চ পদে আসীন হবেন একদিন।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি বলেছেন, এটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী বিদায় অনুষ্ঠান। একজন ইউএনও’র বিদায় অনুষ্ঠানে কোন সাংসদ উপস্থিত থাকার কথা নয়। স্বাধীনতার ৪৮ বছরের ইতিহাসে দেশের কোথাও এমনটি হয়নি। এ ধরণের আড়ম্বর অনুষ্ঠান করে বিদায় সংবর্ধণা দেয়ার নজির নেই।
তিনি বলেন, মাছ এবং পানির যে সম্পর্ক, সরকারি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরও ঠিক তেমন। ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী একজন সরকারী কর্মকর্তা। আমি সরকারী দলের সাংসদ ছিলাম। আমার স্ত্রীও বর্তমান সরকার দলের সংসদ সদস্য। আমি এবং আমার স্ত্রী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য এখানে এসেছি। কারণ, উখিয়ার ইউএনও সরকারের এবং জনপ্রতিনিধিদের আস্থা অর্জন করে প্রতিটি মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন।
বিদায়ী উখিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, উখিয়া আমাকে যতটুকু দিয়েছে, তার চেয়েও বেশি নিয়েছে। কারণ ২০১৭ সালে যখন বানের স্রোতের মতো রোহিঙ্গা আসছিল তখন তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রামু থেকে এক কাপড়ে উখিয়ার ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করি। দায়িত্বের কারণে ওই সময় একদিনের জন্যও ছুটি নিতে পারিনি। এমন কি আমার সন্তান সম্ভাবা অসুস্থ স্ত্রীর প্রতিও যত্ন নেয়া সম্ভব হয়নি। যার কারণে আমার প্রথম সন্তানটি মারা গেছে এখানে। যেটি কখনো ভুলতে পারবো না।
তিনি বলেন, উখিয়ার সাথে আমার আত্নার সম্পর্ক। ভালোবাসার সম্পর্ক। পৃথিবীর যেখানে থাকিনা কেন উখিয়ার মানুষের জন্য আমার ভালোবাসার জায়গা থেকে যখন যেভাবে সম্ভব হয় কাজ করার চেষ্টা করবো।
তিনি আরো বলেন, আমি সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের দু:খ কষ্টের বিষয় গুলো জানার চেস্টা করেছি এবং তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করেছি। আপনাদের যোগ্য নেতৃত্ব এবং সহযোগিতার কারণে ভালো ভাবে কাজ করতে পেরেছি। সরকারি দায়িত্ব পালনকালে সবার উপকার করা সম্ভব হয়নি। তবুও সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার আচরণে, আমার কাজে কখনো কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।
উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আমিমুল এহসান খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরী’র মতো একজন ভালো নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে যদি আরো কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পেতাম তাহলে ভালো কিছু শিখতে পারতাম। তিনি এমন একজন মানুষ যিনি পুরো উপজেলার মানুষকে তাঁর নিজের একটি পরিবারের মতো করে আপন করে নিয়েছিলেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিদায়ী ইউএনও নিকারুজ্জামান চৌধুরীর সহধর্মীনি, উখিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান কামরুন্নেছা বেবী, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মর্জিনা আকতার, উখিয়া আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, রত্নাপালং ইউনয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খাইরুল আলম চৌধুরী, হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম, জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী, পালংখালী ইউনয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন।
এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
পুরো অনুষ্টান সঞ্চালনা করেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাইহানুল ইসলাম মিঞা।
ইউএনও বিদায়ী সংবর্ধণা অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা পরিষদ, উখিয়া থানা পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদানসহ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply