নিজস্ব প্রতিবেদক: গত বছর এই দিনে অধিক শ্রমিক মজুরী, শ্রমিক সংকট ও ধানের দাম কম থাকায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামে কৃষক আবদুল মালেক সিকদার তার ধান ক্ষেতে আগুন দিয়েছিল। সেই কথা সবারই কম বেশি অজানা নয়। আর এ বছর করোনা পরিস্থিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ধান কাটা শ্রমিকরা না আসার সম্ভাবনা নিয়ে ধান পাকার এক সপ্তাহ আগ থেকে চিন্তিত হয়ে উঠে কৃষকেরা। কৃষকের এই নির্মম দিনগুলোতে সহযোগিতার নামে ধান ক্ষেতে ছবি তোলা ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
কৃষকের ধান কাটা নিয়ে সারা দেশে যে ভিন্ন চিত্র দেখা দিয়েছে, তার একটি সরেজমিন রিপোর্ট তুলে ধরা হলো।
সারা দেশে করোনা সংক্রমন রোধে লক ডাউন চলছে বিভিন্ন জেলায়। ফলে কৃষকের পাকা ধাঁন কাঁটার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। মাঠের পর মাঠ রয়েছে পাকা সোনালী ধান। অপরদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে সামনে হতে পারে বৃষ্টি, ঝড়ো হাওয়া। ফলে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে কৃষকের ধান। এই ধান নষ্ট হলে খাদ্য সংকটে পড়বে পুরো দেশ। এই অবস্থায় কৃষকের পাকা ফসল ঘরে তুলতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, , অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, প্রশাসন ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ ।এসব কর্মকান্ড পত্র-পত্রিকায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত।যা দেখে প্রশংসা করছে সমাজের সকল পেশাজীবির মানুষেরা।অন্যদিকে কৃষকদের পাশে থেকে মাঠে যারা সহযোগিতা করছে, তা নিয়ে তেমন মুখে হাসি নেই কৃষক পরিবারের।কেননা একজন ধান কাটা শ্রমিক সারাদিন ক্ষেতে ধান কাটে। কিন্তু যারা সহযোগিতা করতে দেখা যাচ্ছে, তারা তো একটা সময়ের জন্য ধান কাটে।এরপর ধান ক্ষেতে কয়েকটি ছবি তুলে উধাও হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌলভীবাজারের এক কৃষক বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর হাওরে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হয়েছে। ৫শ টাকা দৈনিক শ্রমমূল্যেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফসল ভালো হওয়াতে খুশি। কিন্তু এ খুশি মনে হয় কান্না ডেকে আনছে। যদি বিগত ২০১৭ সালে অকালবন্যার মতো এবারো ফসল হারিয়ে যায় তাহলে গোটা দেশ অনাহারে কাটাতে হবে। যেসব সংগঠন কৃষকের পাশে খন্ডকালীন একটা সময় ধান কেটে , হাতে বা মাথায় করে মাঠ থেকে মাত্র একবার বোঝাই করে ধান নিয়ে যাচ্ছে, সেসব সংগঠন সত্যিকার অর্থে কৃষি নির্ভর দেশে কৃষকদের অন্তত একটা দিন করে ধান কেটে দিত, তাহলে প্রত্যেক কৃষকের মুখে হাসির চিত্র ফুটে উঠতো। তবে এ দূর্যোগের আগ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে, যার জন্য কৃষকেরা অনেক খুশি। আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এখন সুফল হিসেবে ক্ষেতে সোনালী ধান।
এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যহত ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার বিষয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ইতোমধ্যেই সতর্ক বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। করোনার কারণে খাদ্য সংকট দেখা দিবে পুরো বিশ্বে।দেখা দিতে পারে দুর্ভিক্ষও। এর প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে।যার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যেই করোনা মহামারির কারণে মন্দার হাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও মজুদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশনাও দিয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে হাওরাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাতটি জেলায় এবছর শুধু হাওরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত কাটা হয়েছে ২ লাখ হেক্টর জমির ধান যা শতকরা ৫০ ভাগ।
এ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগের ফলে হাওরের কৃষকেরা ভালোভাবে ধান কাটতে পারছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তুলেছে তারা।
পরিবহন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ধান কাটার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকদের আনার ব্যবস্থা আমরা করেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এসেছে। শ্রমিকের পাশাপাশি হাওর এলাকায় ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার ও রিপার ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে পুরোদমে ধান কাটা চলছে।
এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন-কৃষকলীগ, ছাত্রলীগ, অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, প্রশাসন ও স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ কৃষকের ধান কাটায় সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।
Leave a Reply