মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া
যৌথভাবে অর্গানিক ব্রয়লার মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পুটিবনিয়া গ্রামের নারী উদ্যোক্তা লায়লা বেগম, আনোয়ার বেগম, সাকেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম-২ এবং রহিমা বেগম৷ আইওএম এর অর্থায়নে ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতায় ইকরা প্রকল্পের অধিনে ৩৫ হাজার টাকা করে পাঁচ জন নারী উদ্যোক্তা মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে।
উক্ত প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিক উপায়ে মুরগী পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ১ হাজার ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন বাণিজ্যিক খামারের কার্যক্রম। প্রথমবারে তারা বাম্পার লাভের মুখ দেখেন। সেখান থেকে মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে রমজানের শুরুতে পবিত্র শবে কদর এবং ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে আবারও ১ হাজার মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু করে দ্বিতীয় ব্যাচ। উদ্যোক্তাদের কঠোর পরিশ্রম ও বিজ্ঞান সম্মত পরিচর্যার ফলে প্রতিটি মুরগী ২৭ দিনে ১৪০০-১৮০০ গ্রাম ওজন হয়। প্রতি কেজি ১৪০ টাকা বিক্রি করে প্রায় ১ লক্ষ টাকা লাভবান হয়। এবারও আশানুরূপ লাভ করতে সক্ষম হয়। এভাবে যৌথ খামারে প্রতিদিন ৫ জনই কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। খামারকে রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষীত রাখার জন্য নিয়মিত বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত সহ ভ্যাকসিন প্রদান করে থাকেন।
মুরগী পালন পদ্ধতি সম্পর্কীত প্রশ্নের জবাবে- আনোয়ার বেগম (৩২) বলেন, দীর্ঘদিন অন্যের খামারে নামমাত্র মুজুরিতে কাজ করেছিল। সেখান থেকে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। পরবর্তিতে ইউনাইটেড পারপাসের ইকরা প্রকল্পের কল্যানে বাণিজ্যিক মুরগি পালন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা পাই। এভাবে আমরা আরো পাঁচজন মিলে যৌথ ভাবে কর্মমুখী ব্রয়লার মুরগীর খামার শুরু করি। প্রতিটি ব্রয়লার বাচ্চার সময় বেঁধে ৩০-৫০ টাকাই ক্রয় করতে হয়। এই বাচ্চগুলো বিক্রির উপযোগী করে গড়ে তুলতে ২৫-৩৫ দিন সময় লাগে। প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা, বেসরকারি সেবাদন সংস্থা এবং ইউনাইটেড পারপাসের কর্মীরা নিয়মিত খামার পরিদর্শন করে সকল প্রকার পরামর্শ সবসময় দিয়ে থাকেন। আমি সহ খামারে আরো কাজ করে সংসার চালাচ্ছে একই এলাকার পাঁচজন নারী উদ্যোক্তা।
নারী উদ্যোক্তা লায়লা বেগম (২৮) জানায়, ‘নিজেরাই কাজ করে ব্যবসায় লোকসানের চেয়ে লাভের অংশটাই বেশি থাকে। এখন পোল্ট্রি খামার করে স্বাবলম্বী। বর্তমানে আমাদের পোল্ট্রির খামার দেখে এলাকার নারী সমাজ উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ইতিমধ্যেই উখিয়ায় অনেকেই এ ব্যবসায় উৎসাহী হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নারী সমাজ তথা সকল বেকার মানুষ পোল্ট্রি ফার্ম করে নিজেই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন সে লক্ষে আইওএম’র অর্থায়নে ইউনাইটেড পারপাস প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করছে’।
তাদের মধ্যে আরেকজন উদ্যোক্তা সাকেরা বেগম (৪০) বলেন, ‘ বর্তমানে আমরা পোল্ট্রি করে সংসার চালাই। এখানে কাজ করার আগে সংসারে অভাব ছিল। স্বামীর একার টাকায় সংসার চলত না। এখন আমি খামার করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলছে’।
আনোয়ার বেগম-২ (৩০) খামারে করে ভাগ্য বদলে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা একজন ৩৫ হাজার টাকা করে পাঁচ জন যৌথ ভাবে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। এখন লাভের টাকা দিয়ে পাশে একটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ করার পরিকল্পনা করছি। আমাদের পক্ষ থেকে আইওএম ও ইউনাইটেড পারপাসকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের সহযোগিতায় আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হতে চলেছে।
রহিমা বেগম (২৮) বলেন, আমাদের পোল্ট্রি খামার দেখে এলাকার অনেক নারী-পুরুষ পোল্ট্রি খামার করে তারাও আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
তিনি আরো বলেন, অবহেলিত নারী সমাজকে এগিয়ে নিতে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, গবাদি পশু পালন, নকশী কাঁথা, টেইলারিং, হস্তশিল্প ও কম্পিউটার প্রশিক্ষন সেন্টার গড়ে তুলতে চাই আমরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাহাব উদ্দিন বলেন, উখিয়ায় এমন নারী উদ্যোক্তা খুবই কম। লায়লা বেগম, আনোয়ার বেগম, সাকেরা বেগম, আনোয়ারা বেগম এবং রহিমা বেগম এর মতো আরো উদ্যোক্তা তৈরি হলে শুধু উখিয়াতে না কক্সবাজার জেলা তথা সারা দেশ থেকে বেকার সমস্যা দূর করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে হাঁস-মুরগী, গরু, ছাগলের খামার করে স্বাবলম্বি হওয়া সম্ভব। এতে বেকার সমস্যা লাঘবের পাশাপাশি আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়৷ আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আইওএম অর্থায়নে ইউনাইটেড পারপাসের এমন উদ্যোগ এলাকার নারীদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত।
Leave a Reply