রহমত উল্লাহ:: টেকনাফ
টেকনাফ ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের কক্ষের পাশে চেয়ার-টেবিল পেতে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দালালরা। এমনকি প্রত্যেক স্বাক্ষরের জন্যও গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ হাজার টাকা। অফিসের কর্মকর্তারা নয়, সব সেবা নিয়ন্ত্রণ করছে দালালরা।এ দালালের প্রধান শাহ আলম শাহীন।
টেকনাফ ভূমি অফিসের ভিতরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। টেকনাফ ভূমি অফিসে গ্রাহকদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবে তাদের হাতে নেই অফিসের নিয়ন্ত্রণ। আর সব সেবাই সম্পন্ন হচ্ছে শাহ্ আলম শাহিনের ইশারায়।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কর্মকর্তাদের মতো অফিসে চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করে কাজ করছে মোঃ শাহীন। গুরুত্বপূর্ণ নথি, সরকারি আসবাবপত্র সবই থাকছে তার নিয়ন্ত্রণে। নামজারি করতে সরকারি খরচ লাগে এক হাজার ১১৫০ টাকা। কিন্তু দালালরা দাবি করেন ৪০ হাজার টাকা। ১২০ টাকার খাজনা-খারিজের জন্য গুনতে হয় ২০ হাজার টাকা।
গোপন ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা যায়, সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন নাজিরের কক্ষে টেবিলে বসে দিব্যি দাফতরিক কাজ করছেন শাহিনসহ কয়েকজন দালাল। এই দালালরা প্রকাশ্যেই গ্রাহকের কাছ থেকে সেবার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
টেকনাফ ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন , ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার, অফিস সহায়ক খানন পাল ও তসিলদার হেলাল উদ্দিন সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও এখানে রয়েছে তাদের ব্যক্তিগত নিয়োগ দেয়া ডজনখানেক বহিরাগত দালাল।
নামজারি সহ যে কোন কঠিন কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাজগুলো সম্পাদন করেন মোঃ শাহ্ আলম শাহিন ও বহিরাগত দালালরা। শুধু স্বাক্ষর করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শাহিনের ইশারা ছাড়াই কোন প্রক্রিয়াধীন ফাইলে স্বাক্ষর হয় না। আমজাদের রয়েছে ডজনখানেক দালাল।
আরো জানা গেছে, জমির নাম খারিজ ও খাজনার জন্য দুই হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার পর্যন্ত বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে সেবা গ্রহীতাদের। যাদের টাকা দিয়ে পেছনে পেছনে ঘুরছেন তারা যে শুধুই দালাল তা গ্রাহকদের জানা নেই। সেবা প্রার্থীরা জানে শাহীন সরকারী কর্মকর্তা।
টেকনাফ ভূমি অফিসের প্রতিটি কক্ষের জন্য রয়েছে ভেতরে-বাইরে আলাদা দালাল চক্র। এদের প্রধান শাহ আলম শাহিন। কারো কাজ রুমের ভেতরে আর কারো কাজ বাইরে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের ভুলভাল বুঝিয়ে কাগজ-পত্র নিজেদের দখলে নেয়া শাহিনের কাজ। এরপর নানারকম কাজের নাম বলে হয় দর কষাকষি। এই দালালদের দুই ভাগে দিতে হয় টাকা। কাগজ হাতে নেয়ার পরই গুনতে হয় অগ্রিম টাকা। এরপর কাজ শেষে বাকি টাকা দিতে হয়। এটাই শেষ নয়, চুক্তির পরও তৈরি হয় নানা জটিলতা এবং তার জন্য দিতে হয় আলাদা টাকা।
এদিকে, সেবা গ্রহীতারা বলছেন, কোন প্রকার সরকারি নিয়োগ ছাড়া সরকারের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিসে কী করে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করছে শাহীন ও অন্যান্য দালালরা? শাহীন সবসময় কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে আসা যাওয়া করে। এবং শাহীন সবসময় বলে তার সাথে নাকি অ্যাসিল্যান্ডের ভালো সম্পর্ক ।এ নাম ভেঙে আমাদের লোকজনকে ভয় দেখায়।
ভূমি অফিসে কাজ থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, আমার নিজের নামজারি করার জন্য আমি নিজে দৌড়াদৌড়ি করতেছি। শাহিন দেখলে বলে, তোমার কাজ আমি একদিনে করে দেব। এবং এর জন্য ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে আমাকে হুমকি দিয়ে থাকে।তাকে ছাড়া না কি এই কাজ কেউ করাতেও পারবেন না।
ভুক্তভোগী এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, সাবরাংয়ের যেকোনো কাজ নামজারিস বিভিন্ন কাজ শাহিনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এটা আমার জানা। তিনি তাদের বলে ২০ থেকে ৩৯ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে জানিয়েছেন শাহিন দালাল । ৫০০ টাকা দিলে মিষ্টি খেতে আরো দুই হাজার টাকা দাবি করেন এ দালাল।
তিনি আরো বলেন, বহিরাগত দালালরা অফিসের ভেতরে এমনভাবে চেয়ার-টেবিলে বসে কাজ করছে যে, কারোরই বুঝে উঠার উপায় নেই- কে কর্মকর্তা আর কে বহিরাগত দালাল।
শাহ্ আলম শাহিন কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে অ্যাসিল্যান্ডের লোক হিসেবেই পরিচয় দেন। মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা জানতে চাইলে প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার ভাই নুর মোহাম্মদের কাজ করি এবং অন্য কোন মানুষের কাজ করি না বলে অস্বীকার করে।পরে নানাভাবে বিষয়টি আপসের চেষ্টা শুরু করেন ওই দালাল।
এ ব্যাপারে জানতে টেকনাফ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (অ্যাসিল্যান্ড) এরফানুল হক চৌধুরী বলেন, এখনো এ সম্পর্কে তেমন জানি না। যদি বহিরাগত দালালদের দিয়ে কার্যক্রম চলে আমি অব্যশই ব্যবস্থা নেব। একজন কর্মকর্তার কক্ষের পাশেই চেয়ার-চেয়ার টেবিল বসিয়ে কী করে দালালরা কাজ করতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কোনভাবেই সম্ভব না। এমন অপরাধ যারা করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র -কক্সবাজার বার্তা
Leave a Reply