অর্থের বিনিময়ে জেলে কমিটি-কার্ড বিক্রি হিড়িক!
ব্যাঙ্গের ছাতার মতো টেকনাফে জেলে সংগঠন!বিপাকে প্রকৃত জেলারা
মোঃ আরাফাত সানি,টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের উপজেলা-পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে জেলেদের বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে টাকার বিনিময়ে মৎস্যজীবী জেলে কমিটি গঠন ও কার্ড দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সমস্ত সংগঠনে সদস্যরা আদৌ কি জেলে! জনমনে প্রশ্ন?
টেকনাফ উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজারের মতো সরকারি তালিকাভোক্ত জেলে রয়েছে। এ সব জেলেরা সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। গেল ৬৫ দিনে সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া জেলেদের সরকার কতৃক জেলেদের ২ ধাপে ৮৬ কেজি চাইল বরাদ্দ প্রধান করে এর মধ্যে ১ম-২য় পর্যায়ে ইতিমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ বরাদ্দকৃত চাল পেয়ে গেছেন অবশিষ্টরা চলতি সপ্তাহে পেয়ে যাবেন বলে উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছেন। তালিকাভোক্ত জেলে ছাড়া যে সমস্ত জেলে এখনো তালিকাভোক্ত হয়নি। তারা সঠিক কাগজপত্র প্রধানপূর্বক তালিকাভোক্ত হতে পারবে বলে উপজেলা সিঃ মৎস্য অফিসার মো. দেলোয়ার হোসেন জানান। ওই তালিকাভোক্ত জেলেদেরকে দেওয়া হচ্ছে জেলে কার্ড যে কোন বিপদে-আপদে এমনকি ফ্রিশিং ট্রলার বিকল হয়ে অন্য দেশে চলে গেলে ওই কার্ডের মাধ্যমে সেদেশে নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। কিন্তু অন্যান্য সরকারি জেলে কার্ড ছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য হবেন তারা কোন সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার ইত্যাদি পাবে না বলে মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়।
এদিকে টেকনাফ উপজেলা ও পৌর সভায় জেলে সংগঠনের নাম দিয়ে কতিপয় কয়েকজন ব্যক্তি সুযোগ-সুবিধা আদায়ের গুরুত্বর অভিযোগ উঠেছে। এ সমস্ত নামধারী জেলে পরিচয়ে ইয়াবা ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। গেল কয়েকদিন আগে শাহাপুরের দ্বীপে জেলা সমিতির সভাপতি নজির আহমদ ও অসাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও মাদক লুটপাটের ঘটনায় বর্তমানে পলাতক হয়েছে। অপরদিকে টেকনাফ মডেল সভার নাইট্যং পাড়া এলাকার ছৈয়দ আলম ও শুক্কুরে ফিশিং বোটে ১ লাখ ১০ হাজার ইয়াবাসহ জাহেদ নামের এক যুবককে আটক করেছে।
এদিকে টেকনাফ উপজেলার শাপলা পুর থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৪৫ টি ফ্রিশিং ঘাট রয়েছে। ওই সমস্ত প্রতিটি জেলে ঘাটে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম দিয়ে মাদক ও মানবপাচারসহ ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। যাদের কোন সরকারি বা উপজেলা পর্যায়ে কোন নিবন্ধন নাই বলে উপজেলা মৎস্য সূত্রে জানা গেছে। তাদের দেওয়া তথ্য মনে দুইটি সমিতি নিবন্ধন রয়েছে তবে তা-ও মৎস্য অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত নহে। সমবায় অধিদপ্তর থেকে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে নিবন্ধন নিয়েছেন।
উল্লেখিত ৪৫ টি ফিশিং ঘাটের সভাপতি ও সম্পাদকরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে সাগরে যাওয়া ফিশিং বোট, বিহিঙ্গী নৌকা ও টানা জাল থেকে সপ্তাহ ও মাসিক টাকা আদায় করে বলেও সাধারণ জেলেরা জানান।
এ ছাড়া উল্লেখিত ঘাটের সভাপতি-সম্পাদকরা মানবপাচার, ইয়াবা ও স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। এরা তালিকাভোক্ত জেলে ছাড়া জেলে নামধারী সংগঠনের নেতাদের সাথে আঁতাত করে টেকনাফ উপজেলায় শত-শত সমিতি গঠন করে দিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। কম্পিউটারের দোকান থেকে বানিয়ে দিচ্ছে জেলেদের নকল আইডি কার্ড! যে কার্ড নিয়ে প্রকৃত জেলেরা পড়েছে বিপাকে। তাই টেকনাফ উপজেলার তালিকাভোক্ত জেলে ও নেতৃবৃন্দরা অবিলম্বে জেলে নাম ধারী ভুঁইফোড় সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
উক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা সিঃ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান- জেলেদের বিভিন্নভাবে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে মৎস্য সমিতি ও জেলে কার্ড বানিয়ে দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর মোটেই অবগত নয়। অগোচরে আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে হয়তো করছে! যদি কেউ অভিযোগ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শুনেছি কয়েকজন কতিপয় মৎস্যজীবী নেতা পরিচয়ে এর সাথে জড়িত। সবার প্রতি অনুরোধ এরকম ভুঁইফোড় সংগঠন ও নেতাদের পাল্লায় যাতে না পরে। আপনারাও প্রচার প্রচারণা করুন। যাতে সাধারণ জেলের সচেতন হয়।
Leave a Reply