বিশেষ প্রতিনিধি:(টেকনাফ ৭১)
সরকারী নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে কক্সবাজারের টেকনাফে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসার ফাঁদ বসিয়েছে কথিত ডাঃ ইব্রাহীম উরফে বর্মায়া ডাক্তার। কোন স্বীকৃত প্রতিষ্টানের শিক্ষা বিহীন বছরের পর বছর নিজেকে বাত, ব্যাথা, প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে গ্রামের অশিক্ষিত সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছে পয়সা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অহরহ। বেআইনী ভাবে রোহিঙ্গা শিবিরের বাহিরে এসে সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ভূয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ বানোর মতো জালিয়াতিও বাদ দেয়নি এমআরসি ভূক্ত এই রোহিঙ্গা দম্পতি।
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিয়ম মতে কারো নামের আগে ডাঃ লিখতে গেলে (বিএমডিসি)র অনুমতি থাকার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নিয়ম মতে একজন পল্লী চিকিৎসক শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম রয়েছে দাবী করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেকনাফ সদর হাসপাতালের বেশ কজন ডাক্তার জানান, সামান্য জ্বর সর্দি কাশি রোগীদের এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে অপচিকিৎসা দেয়ার ফলে অনেক সময় এসব রোগীর দেহে হাই পাওয়ার এন্টিবায়োটিক কাজ দিচ্ছেনা। তার অপচিকিৎসায় রোগ নিরাময় না হওয়ায় বিভিন্ন সময় অপ্রয়োজনীয় ঔষুধ ও পরীক্ষানিরিক্ষায় ভরা ব্যবস্থা পত্রসহ সেই সব রোগীরা হাসপাতালে আসেন।
ভূক্তভূগী রোগীরা জানান, কারনে অকারনে ল্যাব মেডিকো নামের একটি প্যাথলজিতে একগাদা পরীক্ষা লিখে রোগী পাঠিয়ে থাকে। ৪৫% কমিশনে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য দৈনিক রোগী প্রেরণ করার কথা স্বীকার করেছেন এই কথিত চিকিৎসক।
ডেইল পাড়া এলাকার মোঃ হোসেন নামক এক বাত ব্যাথার রোগী জানান, শুরুতেই ক্যলসিয়াম ও রক্তশূন্যতা, থেরাপীর কথা বলে তিন থেকে চার হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এসবে কোন উন্নতি না হয়ে কক্সবাজার প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ ডাক্তারে কাছে গেলে ভূল চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান। একই বক্তব্য কলেজ পাড়া এলাকা ষাটোর্ধ্ব মরিয়ামের। এরকম আরো আসংখ্য রোগীর একই বক্তব্য পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, বিগত ১৯৯১সাল পরবর্তী মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কথিত চিকিৎসক ইব্রাহীমের পরিবার মোচনী নিবিন্ধীত রোহিঙ্গা শিবিরে এমআরসি ভূক্ত হয়। রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসের সুবাদে শিবিরের অভ্যান্তরে এমএসএফ হল্যান্ড নাম একটি আন্তর্জাতিক এওনজিও’র পরিচালনাধীন চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রথমে দারোয়ান পরে ওয়ার্ড বয় হিসেবে চাকুরী করে। কয়েক বছর চাকুরী করে টেকনাফ পৌর সভার বাস ষ্টেশন পানবাজার এলাকায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে নিজেকে নিউরো স্পেশালিষ্ট, কখনো বাত ব্যাথা প্যারালাইসিস রোগের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ধান্ধা শুরু করে। বছর দু’এক না যেতেই কথিত চেম্বারে নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পড়ে কারা ভোগ করেন। সেখান থেকে বিতাড়িত হয়ে লেঙ্গুরবিল রোডে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফরের মার্কেটে চিকিৎসার নামে ধান্ধার আস্তানা গাড়ে সাথে সাথে ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি টেকনাফ পৌসভার পুরাতন পল্লানপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসতি শুরু করে। রোহিঙ্গা সন্তানদের জন্য শিবিরের অভ্যান্তরে পড়ালেখার ব্যবস্থা থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ বানিয়ে টেকনাফ আদর্শ বিদ্যালয়ে ভর্তি করায়। তার এসব অপকর্ম থেকে রেহাই পেতে কৌশলে তার রোহিঙ্গা স্ত্রী ভাব জমায় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও মিডিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে। তাই প্রশাসনের নাগালের বাহিরে রয়ে যায় রিতিমতো।
কথিত চিকিৎসক ইব্রাহীমের কাছে এসব বিষয় জানতে চাওয়া হলে সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ইয়াবা সেবন বন্ধ করেছি কয়েকমাস আগে। পেটের দ্বায়ে তিনি এসব অপকর্ম করছেন বলে জানান। তবে তিনি একা নন এসব অপকর্মে ফার্মেসী মালিকও জড়িত রয়েছেন বলে দাবী করেন। তথ্য উদঘাটনে টোপ দিয়ে কৌশল অবলম্বন করলে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ টিটু চন্দ্র শীল জানান, পল্লী চিকিৎকরা প্রাথমিক চিকিৎকার বাহিরে চিকিৎসা দেয়া অবৈধ। ইতিপূর্বে তার অপচিকিৎসার বিভিন্ন তথ্য রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে পেয়েছি। এসব অপচিকিৎসা থেকে জনস্বাস্থ্য নিরাপদ রাখতে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে সুপারিশ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রোহিঙ্গা সন্তানদের জন্য শিবিরের অভ্যান্তরে শিক্ষা প্রতিষ্টান রয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে স্কুলে ভর্তির বিষয়টি গুরত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।
Leave a Reply