কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের রামুতে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা লুটের ঘটনার একটি অডিও অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে। অডিও সূত্রে জানা যায়, ছাত্রদলের রামু উপজেলা আহ্বায়ক এই লুটের সঙ্গে জড়িত। সানাউল্লাহ সেলিম নামের এই ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে ইয়াবার চালানটি লুট করা হয়। এরপর বিক্রির ২৮ লাখ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন স্থানীয় ছাত্রদল ও বিএনপির অন্তত ২৩ নেতাকর্মী।
সূত্র মতে, অনলাইনে ভাইরাল হওয়া অডিওগুলো স্থানীয় বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মীও নিজেদের আইডিতে আপলোড ও শেয়ার করেছেন। ঘটনাটি সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের সাবেক বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজলও বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ইয়াবা লুটের ঘটনায় ছাত্রদল ও বিএনপির সম্পৃক্ততার কথা অডিওতে প্রচার হওয়ায় দলীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইয়াবা লুটের বিষয়ে রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও স্থানীয় বিএনপিকর্মী গফুর উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, মায়ানমার থেকে ইয়াবার চালানটি আনা হচ্ছিল। এটির গন্তব্য ছিল রামু উপজেলা সদরের মন্ডল পাড়ার মনিরের বাড়ি। তবে পথিমধ্যে রাজারকুল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাঞ্জেগানা নামক এলাকায় চালানটি লুট হয়।
তার মতে, চালানটি প্রথমে স্থানীয় কাট্টাইল্যা পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ৩০ হাজার ইয়াবার সেই চালানটি মাত্র ২৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে ২৩ জনের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়। ভাগে ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম একাই ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন এছাড়াও দলীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ৮-১০ হাজার থেকে সর্বাধিক ২-৩ লাখ টাকা করে ভাগ পেয়েছেন।
তবে ইয়াবা লুটের ঘটনা সম্পূর্ণই অস্বীকার করছেন উপজেলা ছাত্রদল আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি স্থানীয় পাঞ্জেগানা বাজারটি উপজেলা পরিষদ থেকে ১৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য ইজারা নিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গফুর মেম্বার আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তার মতে, প্রকৃতপক্ষে গত ১৪ জুন ইয়াবার চালানটি লুট হয়। তবে কারা করেছে সেটা তিনি জানেন না।
এদিকে ইয়াবার চালান লুটের পর টাকা ভাগাভাগি করে নেয়ার ঘটনাটি স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তারা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে নিয়ে যেখানে দলের ভাবমর্যাদা বাড়ানোর কথা, সেখানে তৃণমূলের এসব ঘটনায় বিএনপি ক্রমশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
রামু উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল বশর বাবু এই ঘটনায় হতাশা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। তারপর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলাম কবির সওদাগরকে আহ্বায়ক করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দু’সদস্য হলেন রামু উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক শাহনূর উদ্দিন বাবু ও চাকমারকুল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফয়সাল কাদের। অপরদিকে রামু উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাউসার আলম ইমু এই ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি তুলেছেন।
তিনি জানান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সেলিম একজন বিবাহিত ব্যক্তি হয়ে এমনিতেই গণতান্ত্রিকভাবে ছাত্র সংগঠনে থাকতে পারেন না। সেখানে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে ছাত্র রাজনীতিতে করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৈয়বুর রহমান জানান, ইয়াবার চালান লুটের ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে থানায় এখনো কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply