মহাননেতা,মহামানব, পিকলু দত্ত,
সংগ্রহে, শওকত আলী মানিক ||
যুগে যুগে কিছু মানুষের জন্ম হয় , যাঁদের কাছে পরাজিত সময়, তাঁরা অতিক্রম করেন মহাসময়কে। তাঁরা শুধু ইতিহাস নয়, প্র তি মুহূর্তের জন্যে আলোকবর্তিকা হয়ে থাকেন ভবিষ্যতের জন্য। তেমন একজন মানুষ এক মহান নেতা, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমএনএ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বরেণ্য আইনজীবি নুর আহমেদ । যিনি ছিলেন সৎ সাহসী ও কর্মঠ, সহযোগিতামূলক মনোভাব, মধুর আচরণ সর্বজনবিদিত। রাজনীতিতে তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা আর জনসেবার মাধ্যমে তিনি আপামর জনতার হৃদয় জয় করেছিলেন ।মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে তার কৃতিত্বের কথা মানুষ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে অনন্তকাল স্মরণ রাখবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, কক্সবাজার জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমএনএ, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, বরেণ্য আইনজীবি নুর আহমেদ’র ৯ তম মৃত্যবার্ষিকী আজ ।
বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম কক্সবাজারের টেকনাফের কচুবনিয়ার নুরুদ্দীন পন্ডিতের ছেলে হাজী সুলতান আহমদ সওদাগর ও রশিদা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান নুর আহমদ। ১৯৩৮ সালে জন্ম নেয়া নুর আহমদ ১৯৫৪ সালে পেকুয়ার জি, এম, সি, ইনষ্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ এবং ১৯৫৬ সালে আই, এ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানেই তাঁর রাজনীতির হাতেখড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৬০ সালে স্নাতক এবং ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে শিক্ষা জীবন শেষে দুঃখী মানুষের মুক্তির আন্দোলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ।দৃঢ়চেতা এই মানুষটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত করেন ।বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ৬ দফা ঘোষনার পক্ষে জনমত গঠনে তিনি জোরালো ভুমিকা পালন করেন , ঐতিহাসিক ৬ দফা নিয়ে তার ব্যক্তিত্বপূর্ণ বক্তব্য এই জনপদের সাধারন মানুষের মনে সাড়া জাগায় ।
যখন ঢাকাসহ সারাদেশে পাকিস্তানীরা হত্যার হোলিখেলায় লিপ্ত তখন তিনি এই জনপদে আওয়ামী লীগকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সুসংগঠিত করার গুরুভার গ্রহণ করেন। ৭ই মার্চে’র ঐতিহাসিক ভাষণের সময় বঙ্গবন্ধু’র সাথে মঞ্চে উপবিষ্ট থাকার বিরল সৌভাগ্যবান তিনি । বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের নির্দেশ অনুসারে কক্সবাজার সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটি গঠন এবং কমিটির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ।
১৯৬৩ সাল হতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
নীতি-নৈতিকতার সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকে তিনি সমুদ্র জনপদে ভাষা ও স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী গণ-মানুষের আস্থা-বিশ্বাসের ঠিকানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সুদক্ষ নেতৃত্ব এই জনপদে বঙ্গবন্ধুর সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রেখেছেন।।ব্যক্তিজীবনে বা সামাজিক জীবনে কোন সম্পর্ক কখনই তাকে তার অভিষ্ট লক্ষ্য থেকে মুহূর্তের জন্যও বিচ্যুত করতে পারেনি।
১৯৭০ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে সাবেক পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার মহকূমায় (বর্তমানের ৪টি আসন নিয়ে ১টি মহকূমা) এমএনএ নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রম মন্ত্রীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এম এন এ (মেম্বার অফ ন্যাশনাল এসেম্লি) নির্বাচিত হয়েছিলেন , বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচনা কমিটির তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন ।
একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে তিনি টেকনাফ পাইলট স্কুল প্রতিষ্টা এবং কক্সবাজার কলেজ প্রতিষ্টার পর বিনাবেতনে রেক্টর ও কন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ।
কর্ম জীবনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ও স্বনামধন্য আইনজীবি। ১৯৬৬ সালে কক্সবাজার বার-এ যোগদানের মধ্যদিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেনএবং অতি অল্প সময়ে সুনাম অর্জনে সক্ষম হন। তিনি জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ সালের ১৫ মে এড. নুর আহমদ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন।
আজকে রাজনৈতিক সংকটকালীন সময় থেকে উত্তোরণে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর পুরুষ এড. নুর আহমদের নীতি-আদর্শের লালন ও ধারণ করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই। এই মহান নেতার ৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি ।
তথ্য সহায়তা – জাতীয় সংসদে গৃহীত শোক প্রস্থাব সম্বলিত, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে ২৪/৭/২০১১ তারিখে প্রকাশিত নথি থেকে সংগ্রহীত ।
Leave a Reply