হাফেজ মাওঃ মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামঃ-
রমজানের পরের মাস শাওয়াল। রমজানে পূর্ণ মাস রোজা পালন করা ফরজ, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘যখন তুমি (ফরজ দায়িত্ব পালন থেকে) অবসর হবে, তখন (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি মনোনিবেশ করো’ (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৮)। শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে, তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল’ (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪; আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ্-আলবানি)।
শাওয়াল হলো আরবি চান্দ্র বছরের দশম মাস। এটি হজের তিন মাস—শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজের প্রথম মাস; এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। পয়লা শাওয়াল সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই মাসের সঙ্গে হজের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে ঈদের; এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সদকা ও জাকাতের। তাই এই মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এক বর্ণনায় রয়েছে, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ৬ দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ৬ দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যা হিসাবে তার আমলনামায় নেকি লিখে দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তার দরজা বুলন্দ করে দেবেন।’
হাম্বলি মাযহাব ও শাফেয়ি মাযহাবের ফিকাহবিদগণ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন যে, রমজান মাসের পর শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখা একবছর ফরজ রোজা পালনের সমান। অন্যথায় সাধারণ নফল রোজার ক্ষেত্রেও সওয়াব বহুগুণ হওয়া সাব্যস্ত। কেননা এক নেকিতে দশ নেকি দেয়া হয়।
এ ছাড়া শাওয়ালের ছয় রোজারাখার আরও ফায়দা হচ্ছে- অবহেলার কারণে অথবা গুনাহর কারণেরমজানের রোজার উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকে সেটা পুষিয়ে নেয়া।কেয়ামতের দিন ফরজ আমলের কমতি নফল আমল দিয়ে পূরণ করা হবে। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের মধ্যে সর্বপ্রথমনামাযের হিসাব নেয়া হবে।তিনি আরো বলেন: আমাদের রব ফেরেশতাদেরকে বলেন –অথচ তিনি সবকিছু জানেন- তোমরা আমার বান্দার নামাযদেখ; সেকি নামায পূর্ণভাবে আদায় করেছে নাকি নামাযে ঘাটতি করেছে। যদি পূর্ণভাবে আদায় করে থাকে তাহলে পূর্ণ নামায লেখা হয়। আর যদি কিছু ঘাটতি থাকে তখন বলেন: দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কিনা? যদি নফল নামায থাকে তখন বলেন: নফল নামায দিয়ে বান্দার ফরজের ঘাটতি পূর্ণ কর। এরপর অন্য আমলের হিসাব নেয়া হবে।[সুনানে আবু দাউদ]
তাই প্রত্যেক মুমিন নর-নারীর উচিত শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা রেখে পূর্ণ এক বছরের সওয়াব হাসিল করা। কেউ যদি ভাই-বোনসহ অন্যদেরকেও এই রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন, সে ক্ষেত্রে উভয়ই পূর্ণ সওয়াবের ভাগিদার হবেন।
হাফেজ মাওঃ মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম
ইসলামি আলোচক
বাংলাদেশ টেলিভিশন, খতীব
নিশি জামে মসজিদ,চট্টগ্রাম।
Leave a Reply