আব্দুস সালাম, টেকনাফ
টেকনাফে ইয়াবা কারবারীদের হামলায় নুর আলম (৩৮) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত শনিবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত নুর আলম টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকার মৃত ইউছুফের ছেলে।
পারিবারিক সূত্র জানা যায়,শনিবার রাতে স্থানীয় দোকানে বাজার করতে গেলে কথা-কাটাকাটি হয় নুর আলমের সাথে ইয়াবা কারবারী ছৈয়দ আলম,সাইফুল ও ছৈয়দ নুর প্রকাশ ভূলু।ফলে মধ্যরাতে নুর আলমের বসত বাড়িতে হামলা চালিয়য়ে ছৈয়দ আলমসহ ৮/১০ জন লোক।ঐ সময় নুর আলমের চিৎকার শুনে তাকে প্রাণে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন আশপাশের লোকজন। ওই সময় প্রতিপক্ষের দায়ের কোপ ও রডের আঘাতে রক্তাক্ত জখম হন নুর আলম।পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
আহত নুর আলম জানান,আমাকে হত্যার উদ্দেশে প্রতিপক্ষের লোকজন নিজ বসত বাড়িতে হামলা চালায়।সময় মতো আত্নীয় স্বজন এগিয়ে আসায় প্রাণে বেঁচে যাই।
ছৈয়দ আলম গংদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে নম্বরটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়,ছৈয়দ আলম পিতা মৃত আব্দু জলিল,সাইফুল,ছৈয়দ নুর প্রকাশ ভূলু পিতা-জাফর আলম প্রকাশ লম্বা জাফর উভয় নাজির পাড়া এলাকার বাসিন্দা।এক সময়ের রিক্সা চালক, দিন মজুর, মাছ শিকার ও পাহাড়ের লাকড়ী কুড়িয়ে এনে যারা সংসারের চালাত। তারাই আজ এই মরণনেশা ইয়াবার বদৌলতে বর্তমানে বিপুল ধনসম্পদের মালিক। তাদের মাছ ধরার ফিশিং ট্রলার ও জমিজমা রয়েছে। তারা এখন নব্য কোটিপতি। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানের সময় তারা আত্নগোপনে থাকলেও এখন এলাকায় এসে ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করেছে।
স্থানীয়নরা জানায়,দীর্ঘদিন ধরে নাজির পাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে ছৈয়দ আলম, সাইফুল,ছৈয়দ নুর প্রকাশ ভূলু একই পরিবারের সিন্ডিকেট। সাইফুল ও ছৈয়দ নুর প্রকাশ ভূলু এর পিতা জাফর আলম ১০ হাজার ইয়াবাসহ হাতে নাতে আটক হয়ে বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে রয়েছেন। ছৈয়দ আলমের ভাই খুরশিদ আলম ৩০ হাজার ইয়াবাসহ হাতে নাতে আটক হয়ে তিনি বর্তমানে কক্সবাজার করাগারে রয়েছে। এভাবে মাদকের অবৈধ টাকা উপার্জনে ছেয়ে গেছে পুরো পরিবার। বিভিন্ন অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে এই পাররিবারিক সিন্ডিকেট। আইন শৃংখলা বাহিনী মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে বড় বড় ইয়াবা চালান আটক করতে সক্ষম হলেও রাঘব বোয়ালরা প্রতিবারই রয়ে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাগর ও নাফ নদীর পূর্ব-দক্ষিণ জলসীমানা এখন মাদকের একটি ট্রানজিট পয়েন্টে রুপ নিয়েছে। এ দু’টি পয়েন্ট প্রায়ই অরক্ষিত হয়ে পড়ায় মিয়ানমার থেকে বানের স্রোতের মত মরণনেশা ইয়াবা বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্তের নাফনদী ও সাগর উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টসহ সাগর পথে পাচার হয়ে দেশের নৌবন্দর এবং তৎসংলগ্ন সাগর উপকূলে খালাস করছে ছৈয়দ আলমের পারিবারিক সিন্ডিকেট।
ইয়াবা বা মাদক পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে ফিশিং বোট। ছদ্মাবেশে ফিশিংয়ের আড়ালে বস্তা বস্তা ইয়াবা অভিনব কৌশলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করছে ছৈয়দ আলম সিন্ডিকেট।২০১৭ সালের মে মাসে মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে বন্দুকযুদ্ধে অনেক মাদক কারবারি নিহত হন। কিন্তু মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে টেকনাফসহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদকের পাচার এখনও অব্যাহত।এছাড়া দুই দফায় ১২৩ মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করলেও পুরোপুরি সফলতা আসেনি।আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানে অনেকে জালে আটকা পড়লেও ছৈয়দ আলম সিন্ডিকেট নিরাপদেই রয়ে গেছে।এরা আত্নগোপনে থাকলেও অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর এখন প্রকাশ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়।
সচেতন মহলের দাবি ছৈয়দ আলম,সাইফুল,ছৈয়দ নুর প্রকাশ ভূলু এদেরকে আইনের আওতায় না আনলে মাদক ব্যবসা বন্ধ হবে না এলাকায়। প্রতিদিন যেসব মাদকের চালান ঢুকছে,তার ৪ ভাগের ১ ভাগ জব্দ হচ্ছে।বাকি ৩ ভাগই দেশের অভ্যন্তরে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান,নিয়মিত অভিযানে কোনো ধরনের শিথিলতা থাকবে না। মাদক কারবারিরা কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তিনি আরো জানান,এসব চিহ্নিত মাদক কারবারীদের আটকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।এদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে কেউ রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
Leave a Reply