খাঁন মাহমুদ আইউব:: বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজারের টেকনাফ থানা থেকে বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপের আরেক ভয়ংকর দালালের নাম দিদার ড্রাইভার। প্রদীপ আটক হলেও তার অধিকাংশ অপরাধের গুত্বপূর্ণ এই স্বাক্ষী রয়েছে অধরা। সাধারন মানুষকে ইয়াবাকারবারী সাজিয়ে পুলিশকে ভূল তথ্য দিয়ে হয়রানী ও মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার নামে চাঁদাবাজি এবং পুলিশের জব্দকৃত যানবাহনের পার্টস খুলে বিক্রি করা ছিলো তার প্রধান কাজ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ইয়াবা কারবারেরও বিস্তর অভিযোগ।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদার বিল এলাকার মগ কালুর ছেলে দিদার ড্রাইভার উরফে ফাডা দিদার নিতান্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে। বিগত কয়েক বছর আগেও সামান্য মাইক্রোর হেল্পার থেকে মাইক্রোচালক ছিলো। পরবর্তিতে সাবরাং এর শীর্ষ দুই মাদক কারবারীর ইয়াবা পরিবহন করে রাতারাতি পেয়ে বসে আলাদিনের চেরাগ। যেখানে প্রদীপের ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে সেই সুযোগে স্থানীয় এক সুযোগসন্ধানী রেন্ট কার পরিবহন নেতার মাধ্যমে সাবেক ওসি প্রদীপের ভাড়া করা মাইক্রো চালকের দায়িত্ব পেয়ে বসে। সেই সুবাদে প্রদীপ ও থানা পুলিশের সাথে গড়ে উঠে নিবিড় সম্পর্ক। এভাবে সে প্রদীপ বাহিনীর অপকর্মের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সোর্স হিসেবে পরিণত হয়েছিলো। তার দালালির অত্যাচারে এলাকা ছাড়া হয়েছে অনেকে।
রেন্ট কার পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবী, প্রদীপের প্রাইভেট গাড়ি চালানোর সুবাদে এলাকায় সর্বত্র প্রদীপের অবৈধ ক্ষমতার ভয়ভিতি দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি করে রাখতো। বিভিন্ন সময় নিজের সহকর্মী অন্যান্য পরিবহন চালক ও মালিকদের উপর প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করতো। নিজে দ্বীর্ঘদিন পরিবহনের আড়ালে মাদক পাচারের সাথে জড়িত থাকার কারনে টেকনাফের এক শ্রেণীর মাদক কারবারী তার চেনা জানা ছিলো। এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুলিশের মাধ্যম সেজে টাকা হাতিয়ে নিতো। যারা অনৈতিক সুবিধা দিতোনা তাদের পিছনে লেলিয়ে দিতো প্রদীপ কে।
এছাড়াও বিভিন্ন অভিযানে থানায় জব্দকৃত যানবাহন ও মোটর বাইকের দামী পার্টসগুলো রফিক মেকানিকের মাধ্যমে খুলে প্রদীপ বাহিনীর অপর তিন জন প্রাইভেট নোহা ও বোল্ড ডোজার চালক মিলে বাহিরে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পরিবহন মালিকদের।
এদিকে ভূক্তভোগীদের মতে, কমিশনের লোভে নিরপরাধ স্বচ্ছল লোকজন কে মাদক কারবারী সাজিয়ে পুলিশকে ভূল তথ্য দিয়ে আটক করানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রদীপের টাকার খোরাক জোগাতে সাবরাং এলাকার এক প্রবাসীকে পুলিশের মাধ্যমে আটক করার পর মুক্তির জন্য পরিবারের কাছে ৭ লক্ষ টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সাবরাং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক এক মেম্বারের ছেলেসহ একই এলাকার আরো ২ জন নিরপরাধ ব্যক্তি, সদর ইউনিয়নের অন্তত ডজন খানের লোককে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রদীপের মাধ্যমে তুলে নিয়ে গিয়ে টাকা নেয়ার পরেও এসব ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠিয়েছে। প্রদীপ আটক হওয়ার পর তার এমন কর্মকান্ডের ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছে ভূক্তভোগী ও তার মোটর পেশার লোকজন ।
এসব বিষয়ে দিদারের কাছে জানতে চাওয়া হলে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরবর্তিতে তার ব্যবহৃত নাম্বার থেকে আলম পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি প্রতিবেদক কে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।
স্থানীয়দের দাবী, ফকির থেকে মাদক পরিবহন করে তিনটি নোহা ও অর্ধ কোটি টাকার বাড়ি ঘরের মালিক। যদিও দুটি পরিবহন কৌশলে টেকনাফ থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বিক্রি করে দিয়েছে বলে জানিয়ে একটি সূত্র। এদিকে মাদক বিরোধী অভিযানে একজন চিহ্নিত মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সরাসরি অংশগ্রহন নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে বিভিন্ন কানাঘুষা চলছে। ভূক্তভোগীদের দাবী, দিদার উরফে দালাল দিদারকে দ্রুত আটক করলে প্রদীপের অপ্রকাশিত অনেক পাপের ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসবে।
Leave a Reply