মাষ্টার শাহীন সরওয়ার
ড. গাজি কামরুল ইসলাম, একটি ইতিহাস, একজন মনীষী, একজন সমাজ সংস্কারক, একজন শিক্ষার আলোকবর্তিকা বহনকারী, একজন যুগের নকিব, একজন দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারের খানজাহান আলি।
তিনি কক্সবাজারের অন্তর্গত টেকনাফ উপজেলার রংগীখালী জনপদে পা রেখে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দক্ষিণ চট্টলার স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংগীখালী দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসা(বর্তমানে ফাযিল)। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হেফজখানা। নারী শিক্ষার প্রসারে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসা। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের পদভারে প্রকম্পিত থাকতো এই বিশাল দ্বিনি কমপ্লেক্সটি। মূলত: তিনি এই অঞ্চলে শিক্ষা বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তাঁর এই ইসলামী কমপ্লেক্স কর্তৃক প্রতিবছর অনুষ্ঠিত বার্ষিক ইসলামি সম্মেলন ছিল এলাকার মানুষদের কাছে ইদের মতই আনন্দের বিষয়। তিনি এই জনপদের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও দ্বিনি শিক্ষা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মনীষী হলেও আধ্যাত্মিক জগতের মহান সাধক হিসেবেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। তাঁর অনেক সত্য-অলৌকিক ঘটনা লোকে-মুখে গল্পের মতই প্রচলিত।
২০০৬ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে।
সেদিন ছিল রংগীখালী মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষার্থীদের দোয়া অনুষ্ঠান। পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে যুগের স্বপ্নদ্রষ্টা গাজি সাহেব হুজুরের আদেশ-উপদেশ মূলক বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটল। অনুষ্ঠান শেষে হুজুর ডাক দিলেন, শাহীন সরওয়ার কোথায়? আমি ভয়ে কাঁপা কাঁপা ভাব নিয়ে এই মহান ব্যক্তির সামনে দাঁড়ালাম। তিনি তাঁর স্বভাবজাত ভঙ্গিতে আদরের সাথে আমার নাক টেনে, বুকে চেপে ধরে পিঠে হালকা মুষ্টিঘাত করে বললেন, অতীতের পরীক্ষাগুলোর মত এবারের দাখিল পরীক্ষায় A+ না পেলে প্রতিষ্ঠান থেকে তোমার জন্য বরাদ্দকৃত সব সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে(মূলত: তিনি উৎসাহ দেওয়ার জন্য বলেছিলেন)।যাহোক, যথারীতি পরীক্ষা দিয়ে সেদিন A+ পেয়েছিলাম কিন্তু আমি রেজাল্ট নিয়ে আনন্দ উদযাপন করতে পারিনি কারণ ততদিনে আমার সুন্দর রেজাল্টের প্রত্যাশী যুগের নকিব জনপদ ছেড়ে চিরতরে চলে গিয়েছেন কোন এক অজানার পানে। আদৌ তিনি ফিরে আসেননি, হয়তো আসবেননা আর কোনদিন।
সেদিন তিনি এই জনপদবাসীকে দিয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার এক গগণচুম্বী বৃক্ষ, বিনিময়ে জনপদবাসী হয়ত তাঁকে দিয়েছিল দুনিয়াসম বেদনা।
আজ এই মহান মনীষীর অনুপস্থিতিতে এই জনপদের পবিত্রতা ভূলুণ্ঠিত, শান্তি হারিয়ে গেছে কোন সুদূরে।মানুষগুলো পশুত্বকে বরণ করে নিয়েছে নিমিষেই। আজ রংগীখালীর আকাশ-বাতাস আর্তনাদ করছে,
“হে যুগের নকিব,
হে যুগের বিপ্লবী,
তুমি আর একটি বার এসো এই ভঙ্গুর জনপদে, যেখানে অমানুষগুলো জাহেলিয়াতের রাজত্ব কায়েম করেছে।
Leave a Reply