অনলাইন ডেস্ক
“বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস-২০২০’ উপলক্ষ্যে আমি এ বাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ইপিআর-এর বাঙালি সদস্যবৃন্দ পাক হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ইপিআর-এর বেতারকর্মীরা পিলখানা থেকে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসযোগে প্রচার করায় ইপিআর-এর সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আপামর জনসাধারণের সঙ্গে এ বাহিনীর সদস্যরা মু্ক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ বাহিনীর ৮১৭ জন অকুতোভয় সদস্য তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ বীরত্বের জন্য এ বাহিনীর দু’জন বীরশ্রেষ্ঠসহ ১১৯ জন বীরমু্ক্তিযোদ্ধা খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন। আমি তাঁদের এ আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা ও সীমান্ত এলাকায় মাদক, চোরাচালান, নারী ও শিশুপাচার প্রতিরোধ করতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পরপরই এ বাহিনীকে পুনর্গঠন করেন। তিনি সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর আধুনিকায়নেও কাজ শুরু করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এই বাহিনীকে যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। এ লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ পাশসহ বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। একুশ শতকের চ্যালেঞ্জমোকাবিলায় বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক ত্রিমাত্রিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ এর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজিবি পুনর্গঠনপ্রক্রিয়ায় পাঁচটি নতুন রিজিয়ন স্থাপন করে কমান্ডস্তর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবির কার্যকর নজরদারির লক্ষ্যে নতুন ৪টি সেক্টর, ৫টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, ১৫টি ব্যাটালিয়ন, ১৪০টি বিওপি এবং ৩৪টি বিএসপি সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এবং সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের ৬০ কিলোমিটার জলসীমান্তে দুইটি ভাসমান বিওপি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি’র অপারেশনাল সক্ষমতাবৃদ্ধি, বিওপিতে কর্মরত বিজিবিসদস্যদের বাসস্থানসেবা উন্নতকরণ, ভৌতসুবিধা এবং কাঠামোগত নিরাপত্তাজোরদারসহ বাহিনীর সার্বিক কল্যাণ এবং উৎকর্ষবৃদ্ধির লক্ষ্যে আরো ৭৩টি নতুন আধুনিক কম্পোজিট বিওপি নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত ১২ বছরে সৈনিকসহ এই বাহিনীতে ৩০ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো ১৫ হাজার জনবলের নিয়োগপ্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমাদের সরকার বিজিবিতে প্রথম নারীসৈনিক নিয়োগ দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে।
বিজিবিতে কর্মরত অফিসার, জুনিয়র কর্মকর্তা, সৈনিক ও অসামরিক কর্মচারীদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে সীমান্তে চোরাচালানপ্রতিরোধ এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধদমনের লক্ষ্যে সকল ব্যাটালিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকা নির্বাচন করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ৩২৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স এন্ড ট্যাকটিকাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন করা হচ্ছে। চোরাচালানপ্রতিরোধে টহলকার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যেকোনো দুর্গম রাস্তায় চলাচলে সক্ষম ১২০টি অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল ক্রয় করা হয়েছে।
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তে এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তারক্ষায় বিজিবি’র সক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য ১২টি আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ও ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল সংগ্রহ করা হয়েছে। মায়ানমার-সীমান্তের নাফ নদী ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের সাগর উপকূলে ইয়াবাপাচার ও রোহিঙ্গাপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে বিজিবি’র বহরে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ১২টি হাইস্পিড বোট এবং দুইটি পন্টুন সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিজিবি’র জন্য অত্যাধুনিক দুইটি ফাস্ট ক্রাফট, সমুদ্রগামী সাতটি আধুনিক হাইস্পিড বোড, দুইটি মেরিনা এবং দুইটি ট্রেইলার ক্রয়প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্রনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে বিজিবতে একটি স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিজিবি’র জন্য রাশিয়া হতে দুইটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার ক্রয় করা হয়েছে, যা এ বাহিনীর সক্ষমতা আরো একধাপ বৃদ্ধি করেছে।
দেশের সীমান্তের নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষা, সীমান্ত এলাকায় মাদক, চোরাচালান, নারী ও শিশুপাচার প্রতিরোধসহ অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলারক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদদমন ও দুর্যোগকালীন উদ্ধারকর্মকাণ্ডে বিজিবি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে। আমি আশা করি, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে এ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য মহান মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সততা, নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করবেন।
আমি ‘বিজিবি দিবস-২০২০’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করছি
Leave a Reply