অনলাইন ডেস্ক:
মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে চীনা অর্থায়নে পরিচালিত বেশ কয়েকটি কারখানা সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিক্ষুব্ধদের অগ্নিসংযোগের পর শহরটির দু’টি শিল্পাঞ্চলে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে সবচেয়ে রক্তাক্ত দিনে অন্তত ৩৯ জন নিহত হওয়ার পর সোমবার এই সামরিক আইন জারি করা হয়। এদিকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেইজিং।
প্রসঙ্গত, চীনের বিদেশনীতিতে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানকে অভ্যন্তরীণ সংকট আকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদ অভ্যুত্থানবিরোধী বিবৃতি দিতে গেলে সেখানেও আপত্তি তুলেছে বেইজিং। ভারত, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের সঙ্গে মিলে তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের অনেকেই তাই মনে করেন, ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানে চীনের সমর্থন রয়েছে।
মিয়ানমারের অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়ায় বিভিন্ন প্রান্তের লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের বসবাস। রবিবার সেখানে বিক্ষোভকারীরা চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি কারখানায় অগ্নিসংযোগ করলে নিরাপত্তাবাহিনী গুলিবর্ষণ করে। সে সময় হ্লাইংথায়ার আকাশ কারখানার আগুনের কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। রবিবার ইয়াঙ্গুনসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভ্যুত্থানবিরোধীদের বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় অন্তত ৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটে; যা গত ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর একদিনে সর্বোচ্চ।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশি এই দেশটিতে চীনা স্বার্থের ওপর মিয়ানমারের বিক্ষোভকারীদের হামলার পর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বেইজিং। দেশটিতে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস বলেছে, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চীনের অনেক কর্মী আহত হয়েছেন এবং কারখানার ভেতরে আটকা পড়েছেন। সহিংসতা বন্ধ এবং দেশের জনগণ ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জেনারেলদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বেইজিং।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইয়াঙ্গুনের হ্লাইংথায়াসহ অন্যান্য কিছু অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করা হয়েছে।
এএপিপির পরিসংখ্যান বলছে, মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাজা গোলায় অভ্যুত্থানবিরোধীদের মৃত্যুর সংখ্যা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা কীভাবে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে উৎসাহ পাচ্ছে, এই পরিসংখ্যান তারই প্রতিভাস। তবে এ ব্যাপারে জানতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের একজনকে টেলিফোন করলেও কোনও সাড়া পায়নি ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দাবি করছে, গত বছরের ৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি ক্ষমতায় আসায় তারা অভ্যুত্থান ঘটাতে বাধ্য হয়েছে। যদিও দেশটির নির্বাচন কমিশন কারচুপির অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও মনে করছেন, নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটিতে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও তারিখ জানায়নি। অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও তার দলের জ্যেষ্ঠ অনেক নেতাকে আটক করে সেনাবাহিনী। তখন থেকে অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি সু চিকে সোমবার আবারও আদালতে তোলার কথা রয়েছে। অবৈধভাবে ওয়াকি-টকি আমদানি ও ব্যবহার এবং করোনাভাইরাস বিধি লঙ্ঘনসহ ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অন্তত চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
Leave a Reply