আমানুর রহমান,যায়যায়দিন
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত দেশের বিদ্যমান শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। নতুন ও পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে ২০২২ সালে আর বাস্তবায়ন শুরু হবে ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৫ সালে নতুন এই শিক্ষাক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে। সোমবার দুপুরে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রী এ খসড়া রূপরেখায় তার সম্মতি ও অনুমোদন দিয়েছেন বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। এরপরই সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে খসড়া ও পরিমার্জনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল মিলে হবে এইচএসসি’র ফল। এসএসসি পরীক্ষা হবে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমের ওপর। নবম-দশম শ্রেণিতে বিদ্যমান বিজ্ঞান, মানবিক প্রভৃতি বিভাগ থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী কোন বিভাগ নিয়ে পড়বেন, সেটা ঠিক করবেন একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে। এরূপ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমে। প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা থাকছে না। ওই শ্রেণিগুলোতে শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে শতভাগ। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন অর্থাৎ পরীক্ষা হবে ৪০ শতাংশ। ৬০ শতাংশই ধারাবাহিক মূল্যায়ন। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্পকলা (বিদ্যমান চারু ও কারুকলা) এগুলো শতভাগ ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ের কারিকুলাম বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৬০ শতাংশ ও সামষ্টিক মূল্যায়ন (বছর শেষে পরীক্ষা) ৪০ শতাংশ। বাকি বিষয় জীবন ও জীবিকা, তথ্যপ্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতি (বিদ্যমান বিষয়- চারু ও কারুকলা) শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। আর নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৫০ শতাংশ। নবম ও দশম শ্রেণির বাকি বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে শতভাগ। পরিমার্জিত কারিকুলাম প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন এ কারিকুলামে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে বলা আছে। শিখন সময় প্রাথমিকে কতটা, মাধ্যমিকে কতটা হবে তাও বলা আছে। প্রাথমিকের শিক্ষাক্রম-২০১২ এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২০ সম্পর্কেও এ কারিকুলামে বলা আছে। নতুন কারিকুলামে সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে উলেস্নখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোথায়, কোন কোন পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন হবে, সেগুলো আমরা ভাগ করেছি। কোন কোন বিষয় টোটালি ধারাবাহিক মূল্যায়নে যাবে সেগুলো বলা আছে রূপরেখায়। শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্তিমূলক যে বিষয়টি এনেছি, সেখানে ফ্ল্যাক্সিবিলিটি নিয়ে আসা হয়েছে। শারীরিক, মানসিক, সুবিধা বঞ্চিত, প্রান্তিক শিক্ষার্থী সবাইকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আগামী বছর (২০২২ সাল) থেকে কীভাবে পাইলটিং করব তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকে প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে ষষ্ঠ শ্রেণির পাইলটিং করব। প্রাথমিকে ১০০টি প্রতিষ্ঠানে এবং মাধ্যমিকের ১০০টি প্রতিষ্ঠানে পাইলটিং হবে। মাধ্যমিকের মধ্যে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ছয় মাস পাইলটিংয়ের পর আমরা বিশ্লেষণ করতে পারব।
শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্পর্কে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘২০২৩ সালে পরিমার্জিত নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু করতে পারব আশা করি। ২০২৩ সালে প্রাথমিকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে এটি চালু হবে। ২০২৪ সালে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি। ২০২৫ সালে পঞ্চম শ্রেণি ও মাধ্যমিকের দশম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করব। এদিকে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা আর কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং সনদও দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের।####
Leave a Reply