টেকনাফ প্রতিনিধি।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাঁচ মাস ধরে এ চক্রের খপ্পরে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার।
অভিযোগ উঠেছে, এক নারী এনজিও কর্মী এই টাকা হাতিয়েছেন। তবে তার মাধ্যমে টাকা গেছে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিস সহকারী মো. রুবেলের পকেটে। আর রুবেল বলেছেন, এই টাকা সবাই মিলে খেয়েছেন।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মাঠ পাড়া এলাকাবাসী জানান, রুবিনা আক্তার নামে এনজিও কর্মী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের রুবেলের পরিচয় দিয়ে এলাকার গরিব ও অসহায় নারীদের কাছ থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা ও বিধবা ভাতার কার্ড করিয়ে দওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে রুবিনা আক্তার বলেন, আমি পিএইচডি এনজিওতে কর্মরত আছি।মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা ছিল, তাদের কাছ থেকে আমি ৪ হাজার টাকা করে নিয়েছি। সেই টাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের রুবেলকে দিয়ে ফেলছি। তাদেরকে রুবেল অনলাইন ফরমও দিয়েছে।ওই টাকা তিনি ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে (PHD পিএইচডি) এনজিওর বিএমজেড প্রকল্পর পিসি মোঃ মোমেন খান জানান, সংস্থা সকল অনিয়মের বিষয়ে সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলে। কেউ যদি অবৈধ কার্যক্রম করে থাকে তখন আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।অসহায় দরিদ্রদের উপকারের জন্যই এনজিও কাজ করছে দেশে।কিন্তু তাদের দ্বারা যদি কেউ হয়রানির শিকার হয়, তাহলে কেউ পার পাবে না।আপাততে অভিযুক্ত রুবির চাকরি স্থগিত রাখার জন্য অফিসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মাঠ পাড়ার ভুক্তভোগী ১০ নারী মাহফুজা আক্তার, রশিদা বেগম, তৈয়বা খাতুন, নাছিমা খাতুন, মনোয়ারা, ছলিমা খাতুন,মুসফেকা বেগম, তৈয়বা আক্তার, দিলদার বেগম, উম্মে শফিকা জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিডির কার্ড ও গৃহহীনদের জন্য দেয়া ঘরসহ সরকারি বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে রুবিনা আক্তার তাদের কাছ থেকে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। দীর্ঘ সময় পার হলেও সেই সুবিধা না পেয়ে রুবিনার কাছে তারা টাকা ফেরত চান। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই টাকা ফেরত পাননি, বরং কাউকে বললে টাকাও দেবেন না বলে তাদের বিভিন্ন হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে জানান তারা।
মাহফুজা আক্তার বলেন, পাঁচ মাস আগে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড ও ভিজিডির কার্ড দেয়ার কথা বলে আমার থেকে ৪৭০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন রুবিনা আক্তার। মেয়েটি মিথ্যা গল্পের ফাঁদে ফেলেছে। এখন বুঝেছি তিনি প্রতারক।তিনি বলেন, ফোন করলে রুবিনা বলেন,কার্ড পাবা এতো তাড়াহুড়ো কেন। আরও বলেন,বাকি টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেন, না হলে কার্ড পাবেন না।
টেকনাফ উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের সহকারী রুবেল ঘটনার সত্যতা স্বীকার বলেন, আমি পাঁচজন থেকে টাকা নিয়েছি এবং পাঁচজন মা ভাতা পাবেন।এগুলো কি সরকারি ফি- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আমরা সবাই মিলেমিশে খাইছি। আমি তাদের টাকা বিকাশে দিয়ে দেব। ওই নারীরা কেন ইউএনও বরাবর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। আমার কাছে আসলে তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিতাম।’
টেকনাফ উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভুক্তভোগী নারীরা অভিযোগ দিয়েছে। তাদেরকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এসব অপকর্মে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আরো তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মা ভাতা কার্ড করতে কোনো টাকা লাগে না। সরকার সব ফ্রিতে করে দিচ্ছে।
Leave a Reply