আজ সকালে হালিশহরে টেম্পো নিয়ে আন্দরকিল্লা যাচ্ছিলাম! আমার সামনে পঞ্চাশ উর্ধ্ব এক মনমরা মানুষ। চেহেরায় হতাশা ও মনোকষ্টের চাপ। মুখের ভেতর ভন ভন কি যেন বলে যাচ্ছিল।
তাঁর মুখটা ফ্যাকাসে দেখালেও, একটু জেদি স্বভাবেরও বলে মনে হলো। এবার তাঁর সাথে কথা বলবো বলে মনে মনে স্হির করলাম। ঠিক তখনি মানুষটি বলে উঠেন,এই দুনিয়ায় কেউ কারো নয়। আমি তখন মানুষটির বাক্যের সাথে তাল মিলিয়ে মাথা নাড়লাম এবং জিজ্ঞেস করলাম,কি হলো চাচাজান।
ভদ্র মানুষটি এবার বুঝি বলার সঙ্গী খুঁজে পেলেন।।
তাঁর জীবনে একে একে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বলল। শুনে খুবই ব্যাথিত হলাম।
আজ বাবা দিবসে ছোট মেয়ে থেকে হাত খরচের জন্য পঞ্চাশ টাকা চাইলাম। উত্তরে সে আমাকে বাজারে গিয়ে কাজ করতে পরামর্শ দিল। অথচ এই মেয়েটিকে আমি পাঁচলক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছি। এই টাকা জোগাড় করতে আমি কত রাত উপোষ থেকেছি।
বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য। আজ সে মেয়ে আমাকে এমন কথা বলতে পারল। তাই আজ জেদ করে কাজের তাগিদে এই বয়সে আবার রাস্তায় বের হলাম। ভারাক্রান্ত মনে চাচাজান কথাগুলো আমাকে বলছিল। আমার সাথে অন্য যাত্রীরা তা শুনছিল।
চাচা,আরো বলতে লাগল,কাদের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দিলাম। অথচ তারা আজ আমাকে সহ্য করতে পারে না। নাস্তা খাওয়ার জন্য সামান্য টাকা চাইলে উল্টো কথে বলে।
যাক,তারা সুখে থাক। বাকী জীবনটা খোদার উপর ছেড়ে দিলাম। যতদিন পা দু’টো চলবে এবং মনের জোর থাকবে জীবনযুদ্ধে লড়াই করে যাবো। আমি যখন আমার গন্তব্যে নেমে যাবো,তখন চাচা আমাকে বললেন,আমার জন্য একটু দোয়া করিও। আজ সারাদিন চাচার জন্য খুব বেশি খারাপ লাগছে।
হার না মানা জীবনযুদ্ধা চাচার জন্য মন থেকে দোয়া থাকবে আজীবন। না জানি, ঐ চাচার মতো আরো কতো চাচারা পৃথিবীতে মানবেতর ও দু:খভারাক্রান্ত মন নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্যালুট চাচাজান,আপনার জেদি মনোভাব ও আপনার ঠিকে থাকার সংগ্রামী মনোভাবকে।
লেখক- সাইফুল ইসলাম।
Leave a Reply