টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাতভর যুদ্ধ বিমানের হামলা-গোলাগুলি হয়েছে। এতে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে সীমান্তের মানুষ। মূলত মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাখাইন রাজ্যে ফের নিয়ন্ত্রণ নিতে জান্তা সরকার আরাকান আর্মির উপর এ বিমান হামলা চালায়।
গতকাল রাত ১২ টার পর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ঘন্টা পর পরই ভারী গোলার বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধে তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এপারের সীমান্তজুড়ে আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। যার ফলে সীমান্তে ফের অনুপ্রবেশের শঙ্কা রয়েছে।
সীমান্তের বাসিন্দারা বলছে, মিয়ানমারে চলমান টানা কয়েকমাস চলমান যুদ্ধে সীমান্তের বসবাসকারীদের মাঝে আতঙ্কে দিন কাটছে। বিশেষ গতকাল রাত থেকে ব্যাপক গোলার বিকট শব্দ আমাদের বাড়িঘর কেঁপে ওঠে। এমন আওয়াজ আগে কখনো পাওয়া যায়নি। এদিকে, নিরপাত্তার কারণে সীমান্ত মানুষদের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে।
পৌরসভার সীমান্তের বসবাসকারী জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা নুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওপারে টানা কয়েকমাসে চলমান যুদ্ধে এপারে সীমান্ত মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে দিন দিন। গতকাল মিয়ানমারের রাতভর যুদ্ধ বিমানের হামলা চলছে। যার কারণে আমাদের বাড়িঘরের দরজা-জানালা কাঁপছে। এসময় ভয়ে আমরা পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। এমন বিকট শব্দ আগে কখনো শুনিনি। যার কারণে ভয়ে নির্ঘুম রাত কেটেছে।’
টেকনাফের স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহমান বলেন, এরকম বিস্ফোরণের শব্দ আগে কখনো শুনিনি। সারারাত ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি।
এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আজকেও সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেটি মিয়ানমারের ভেতরে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি। পাশাপাশি সীমান্তে বসবাসকারী লোকজনকে জরুরি কাজ ছাড়া সীমান্তে ঘুরাঘুরি না করতে নিষেধ করা হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানায়, রোববার ভোর রাত থেকে সোমবার সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং, হ্নীলা, পৌরসভা, সদর, সাবরাং ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সীমান্তে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে।
শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটের দোকানি মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘সকালেও মিয়ানমারের বিকট গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে মানুষ সাবধানে চলাচল করছে।’
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধে রাখাইনের মংডু শহরের টাউনশিপ ছাড়া বাকি গ্রামে হেলিকপ্টার দিয়ে হামলা চালায়। ফলে কয়েক দিন ধরে এসব এলাকার প্রায় চার হাজার লোক বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্তবর্তী গ্রামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা সুযোগ বুঝে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে।
টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ৯ নম্বর ওর্য়াডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বলেন, ‘রাতে সীমান্তে ভারী গোলার শব্দ পাওয়া গেছে। সকালে কিছুটা শব্দ কমেছে। আমরা বিজিবির সহায়তায় সীমান্তের লোকজনকে জরুরি কাজ ছাড়া অযথা সীমান্তে ঘুরাঘুরি না করতে নিষেধ করেছি।’
Leave a Reply