অনলাইন ডেস্ক:
বরগুনা পাথরঘাটায় আড়াই বছরের সাইমুন নামের এক শিশু মায়ের কবরের পাশে গিয়ে খবর খুড়ে মাকে বের করার চেষ্টা করে। সাইমুনের মা শাহানা বেগম যৌতুকের জন্য শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে শাহানার বাবা শহিদ প্যাদা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল শে-ই বাংলা কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই মায়ের মৃত্যু হয়। একই দিন বেলা ১১টার দিকে শ্বশুর বাড়িতে গলায় ফাঁস দেন তিনি।
শাহানা পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের পদ্মা গুচ্ছ গ্রামের শহীদ প্যাদার মেয়ে এবং একই ইউনিয়নের পশ্চিম বাদুরতলা এলাকার ইউনুস মিয়ার স্ত্রী।
এর আগেও একইভাবে শ্বশুর বাড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ইউনুসের বড় ভাই ইব্রাহিমের স্ত্রী এসিড খেয়ে আত্মহত্যা করে।
সরেজমিনে শাহানার বাড়িতে দেখা গেছে, শাহানার বাবার বাড়ির সামনে একটি নতুন কবরের কাছে শাহানার, তার পাশে আড়াই বছরের ছেলে সাইমুনকে কান্নাকাটি করছে এবং মাকে ডাকছে আর বলছে আমি মায়ের কাছে যাবো। সাইমুনকে ছেড়ে দিলেই মায়ের কবরের পাশে গিয়ে কবরের মাটি খুঁড়তে থাকে আর বলে মায়ের কাছে যাবো। সাইমুনের নানী পারুল কিছুতেই সান্তনা দিয়ে রাখতে পারেছ না সাইমুনকে। বার বার মায়ের কবরের পাশে চলে যায় মাকে উঠানোর জন্য।
শাহানার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ঘরের দরজা বন্ধ করে শাহানা আত্মহত্যা করছে বিষয়টি টের পেয়ে শাহানার স্বামী ইউনুস ও তার মা হালিমা দরজা ভেঙে উদ্ধার করে। এরপর পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক অবস্থার অবনতি দেখে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠায়। পরে সেখানে মঙ্গলবার রাতে শাহানার মৃত্যু হয়।
শাহানার বাবা শহিদ প্যাদা জানান, ‘বিয়ের পর থেকেই শাহানার শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের দাবি করতো। এজন্য বিভিন্ন সময়ে ১০টি গরু দিয়েছেন। সবশেষ গত এক মাস আগে আবারো ৫০ হাজার টাকার জন্য চাপ শাহানার কাছে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন জামাই ইউনুস ও তার মা হালিমা। সে (শাহানা) টাকা নিতে আমাদের বাড়িতে আসলে টাকা দিতে না পারায় আর শ্বশুর বাড়ি যায়নি মেয়ে। গত সোমবার বিকেলে ইউনুসের বড় ভাই ইব্রাহিম আমাদের বাড়িতে এসে অনেক অনুরোধ করে শাহানাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েই ইউনুস ও তার মা হালিমা মিলে মেয়ে শাহানাকে মারধর করে। পরের দিন মঙ্গলবার সকালেও দ্বিতীয় দফায় মারধর করে। এ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গলায় ফাঁস দেয় শাহানা।’
তিনি আরো বলেন, ‘এক দিকে মেয়ে হাড়ানোর শোক, অন্যদিকে ছোট্ট নাতি সাইমুনের এমন আহাজারি, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার মেয়েকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই।
অভিযুক্ত ইউনুসের বাড়িতে গেলে সাংবাদিকের টের পয়ে সবাই অন্যত্র চলে যায়। তবে তাদের পাশের বাড়িতে থাকা ইউনুসের বড় ভাই ইব্রাহিমের দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম জানান, ঘটনার দিন সকালে শাহানার সাথে ইউনুসের ঝগড়া হয়েছে। তবে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলবেন না বলে জানান।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আল মামুন জানান, শাহানা আত্মহত্যা করার বিষয়ে জানতে পেরেছি। বরিশালে শাহানার ময়নাতদন্ত হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ###
Leave a Reply