 
							
							 
                    
নিজস্ব প্রতিবেদক।
ফ্রিল্যান্সিং বদলে দিয়েছে, পঞ্চগড় জেলার বসুনিয়া হাটের দেবিগঞ্জ উপজেলার মো. সুলতান শেখ ও হামিদা দম্পতির ছেলে সুবহান আনছারির । মাত্র ৫ মাস ফ্রিল্যান্সিং করে দেখা পান সফলতার যার মাসিক আয় ১ লাখ টাকা প্রায় ।
শনিবার (১৩ জুলাই) টেকনাফ ৭১ ডটকমের সঙ্গে এক আলোচনায় তার জীবনের সফলতার গল্প শোনান সুবহান আনছারি।
প্রথমদিকে তিনি যখন ফ্রিল্যান্সার কাজ শুরু করেন, এ পেশাকে কেউ ভালো চোখে দেখেন’নি বরং অনেক কটু কথা শুনতে হত তার, তবে তিনি সেখানে থেমে যাননি । দিন-রাত পরিশ্রম করে যেতেন, বুঝতেন না কাজের ধরণ, তবে মনোবল ছিল তার পারতে হবে ।
এদিকে ২০২২ সালে তার মা-বাবা’কে না জানিয়ে স্বপ্নের বাইক বিক্রি করে কম্পিউটার ক্রয় করেন তিনি, পরবর্তীতে নিজের আগ্রহতে ফ্রিল্যান্সিং জীবন শুরু করেন সুবহান।
পরে মা-বাবা তার আগ্রহ দেখে ফ্রিল্যান্সিং জীবনে সফল করতে, করে গেছেন সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা, ফ্রিল্যান্সিং জীবনে সে যতবার ব্যর্থ হন, ততবারই মা-বাবা পাশে এসে দাঁড়াতেন তার ।
কথায় আছে, পরিবারের সাহায্য যেমন দরকার ঠিক, ততটাই দরকার ইচ্ছে শক্তি, মনোবল, আর কঠোর পরিশ্রম।
কারণ দিন শেষে সবাই সফল মানুষকে খুঁজে, কয়জন আর ব্যর্থ হওয়া মানুষের খবর রাখে। তাই তিনি প্রথম প্রাধান্য দেন তার সফলতাকে।
সুবহান আনছারি বলেন, ‘শুরুতে কোনো কিছু বুঝতাম না। গুগল ও ইউটিউব ঘেটে শিখতাম। সফলতার চেয়ে ব্যর্থতাই বেশি হতে লাগল। অনেক ইচ্ছে ছিল ওয়েব-ডেভেলপমেন্টের ওপর কাজ করব। সেটাতে খুব বেশি সফলতা না আসায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর কাজ করতে থাকি। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে ফ্রিলান্সিং শিখেছি, বেশ কয়েক জায়গায় প্রতারণার শিকারও হয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমি ফ্রিলান্সিং শুরুর করার চার মাস পর প্রথম ক্লাইন্ট পায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। সেটি ছিল মাত্র পাঁচ ডলারের প্রজেক্ট, সেই প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে আমার সাতদিন সময় লেগেছিল সাতদিন কাজ করার পর, বাঁয়ার কে কাজ জমা দেয়। বাঁয়ার আমার কাজে খুব খুশি হয়, এবং সে আমাকে মাসিক চুক্তিতে হায়ার করে, সেই থেকে আমার ফ্রিলান্সিং সফলতা শুরু।
তারপর শুরু হয় ফাইভার মার্কেট প্লেসের যাত্রা, সেখানে অনেক বাধা বিপত্তি ছিল। আমার গিগ র্যাঙ্কে আসতো না। টানা তিন মাস ফাইভার গিগ সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ারের পর, হঠাৎ একদিন আমার গিগ প্রথম পেইজে চলে আসে, তখন বেশ কয়েকটি অর্ডার পায়। তার পর আবার গিগ ডাউন হয়। তখন আমার সোশ্যাল মিডিয়াতে যে ক্লাইন্ট গুলা ছিল, তাদের অর্ডার গুলো ফাইভার মার্কেট প্লেসের মাধ্যমে নিয়ে নেয়। এভাবে কিছু অর্ডার বাহিরের ক্লাইন্ট গুলোর মাধ্যমে নেওয়ার কারণে, আবারও ফাইভার গিগ প্রথম পেইজে চলে আসে।
তিনি আরো বলেন, এভাবে আমার ফাইভারে কাজ চলতে থাকে । মাত্র পাঁচ মাস, ফাইভারে লেভেল ২ সেলার ব্যাজ পায়, এক বছর পর টপ-রেটেড নমিনেটেড হিসেবে সিলেক্ট হয়। তারপর আপওয়ার্ক মার্কেট প্লেসে কাজ করেছি, যদি এখনও সে আপওয়ার্কে টপ-রেটেড হতে পারিনি, কিন্তু বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, আমার সফলতা দেখে অনেকেই আমার কাছে ফ্রিলান্সিং শিখতে চায়, তাদের জন্য আমি ফ্রিলান্সিং শিখার ব্যবস্থা তৈরি করেছি। বর্তমানে আমার কাছে ট্রেনিং নিয়েছে দুই হাজারের ও বেশি শিক্ষার্থী। আমার শিক্ষার্থী সফলতার সাথে মাসে ৪০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করছে ।
তিনি নতুন ফ্রিল্যান্সারদের উদ্দেশ্য বলেন, আমার একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে, যা Subhan Ansari লিখে সার্চ করলে পাওয়া যাবে। সেখানে আমি ফ্রিতে অনেক অ্যাডভান্স টিউটোরিয়াল আপলোড করি। যা দেখে অনেকেই কাজ শিখছেন। আমি আন্তরিকতার সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের শেখানোর চেষ্টা করি। আমার কাছে নিজের লাভ লোকসান পরে। শিখানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যখন যতটুকু সম্ভব আমি অন্যদের সহযোগিতা করব। যেটি নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সবশেষে তিনি বলেন, আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন সবসময়। পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না। চেষ্টা আর মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেলে আপনিও একদিন পারবেন, আমার মতো নিজেদের সফলতার গল্প শোনাতে। তাই যত যাই হোক, নিজের উপর ভরসা রেখে, দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করবেন,
পরিশেষে, সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন সবার সফলতার গল্পে তাদের আদর্শ হয়ে গড়ে উঠতে পারি। সবার পাশে থেকে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর।
 
                                         
                                         
                                         
                                        
Leave a Reply