মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী, টেকনাফ
নেটং অর্থাৎ দেবতার পাহাড় চুড়ায় তিনটি প্রবেশ মূখ বিশিষ্ঠি এই বাংকারটি কখন তৈরী হয় তা নিয়ে ভিন্নমত আছে। ১৯৪০ অথবা ১৯৪৫ সালে জাপান সেনাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে ব্রিটিশ সেনারা এখন পাহাড় কেটে অদ্ভুত এই বাংকারটি নিমার্ণ করে বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকলীন সময়ে কয়েক জন ব্রিটিশ সেনা কমান্ডার এই বাংকারের দুটি কক্ষে রাত যাপন করতেন।
নাইট্যং পাহাড় চুড়া থেকে চুড়া মারা এক একটি কামানের গোলা ৫০-৬০ মাইল দুরে মিয়ানমারের কোলাডাং গিয়ে পড়তো। তখন বিকট শব্দ টেকনাফ কেঁপে ওঠতো। মিস্টার রবার্ট হার্স নামের ব্রিটিশ সেনা কমান্ডার যুদ্ধ নিয়ন্ত্রন করতেন। এসময় টেকনাফ আসার জন্য সরাসরি কোন যোগাযোগ ছিল না। কক্সবাজর থেকে বাসে করে উখিয়ার বালুখালী পর্য্যন্ত, তারপর বালুখালী থেকে জাহাজ করে নাফনদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফ আসা যাওয়া হতো। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অর্থাৎ ১৯৪১ সালে মগরা (রাখাইন) মংডুতে মুসলমান নিধন শুরু করে। টেকনাফও এর রেশ ধরে দুই সম্প্রদায়ে দাঙ্গা শুরু হয়। ১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কয়েক হাজার মগ সঙ্গে নিয়ে জাপান সেনারা নাফনদী অতিক্রম করে টেকনাফে ব্রিটিশ সেনাদের হঁটিয়ে দেয়। কিছুদিন পর কোলকাতা থেকে বিপুল সংখ্যক ব্রিটিশ সেনা এস জাপান সেনাদের হঁটিয়ে দিয়ে টেকনাফ পুনরুদ্ধার করে। এই দখল-বেদখল ঘটনায় এবং মগ-মুসলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষের রক্তে নাফনদী রঞ্জিত হয়। এরপর টেকনাফে মগ-মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি ফিড়রিয়ে আনার লক্ষে ব্রিটিশরা ১৯৪২ সালে মগ জমিদার ক্যজাফ্রু চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে টেকনাফ পিচ কমিটি (শান্তি কমিটি) গঠন করে। আইন শৃখলা রক্ষার জন্য সাবরাং এলকার এজাহার আহমদ কেরানী দারুগা, জালিয়া পাড়ার আবদুল শুক্কুর বলিকে সুবেদার ও ছেবর বলিকে হাবিলদার নিয়োগ করা হয়। থানায় মোট নিরাত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করা হয় মোট ৪৫জন। তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক আজগর আলী শাহ, বিচারক (এসডিও) সলিমুল্লাহ খাঁন এবং এসকে দেওলভি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রন এবং মগ-মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে টেকনাফ এসে কয়েক দফা সভা সমাবেশ করেন। ১৯৪২ সালে মার্চ মাসে মহকুমা প্রশাসক আজগর আলীর নেতৃত্বে ৫০ জন ব্রিটিশ সেনা দাঙ্গায় মগদের উস্কানীর অভিযোগে পিচ কমিটির চেয়ারম্যানর ক্যজাফ্রু চৌধুরীকে গ্রেফতার করে কোলকাতায় নিয়ে যান এবং একমাসের কারাদন্ড দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে অর্থাৎ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে টেকনাফ পূর্ব পাকিস্তান অধিনে চলে যায়। টেকনাফের নাইট্যং পাহাড় চুড়া বা আশেপাশে এখন যেসব তাজা গ্রেনেড বা মর্টারশেল পাওয়া যাচ্ছে, অনেকের মতে এসব ব্রিটিশ সেনাদের ওই সময় ফেলে যাওয়া অস্ত্রভান্ডারের অংশ বিশেষ মাত্র। অনুসন্ধান চালালে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র গ্রেনেড মর্টারশেল সহ ল্যান্ড মাইন পাওয়া যেতে পারে। দীর্ঘ কয়েক যুগ আগের পরিত্যক্ত এই ব্রিটিশ বাংকারটি ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে আবিস্কার করে পর্যটকদের দেখার সুযোগ করে দেন টেকনাফ উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুহসিন চৌধুরী। বাংকারটি পরিদর্শনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টেকনাফের পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করবে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি সবেমাত্র জানলাম, দেখা যাক ভবিষ্যতে খোঁজ নিয়ে সংস্কারের উদ্দোগ নেওয়া হবে।
Leave a Reply