নাফ নদীর মোহনায় অসহায় দুটি হাতি
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর মোহনায় গত দুদিন ধরে একটি প্রেগন্যান্ট হাতি ও অপর একটা বাচ্চা হাতি জোয়ারের পানিতে দোল খাচ্ছে। হাতি দুটি ১২/১৩ মাইল দুর থেকে টেকনাফ সদরের পাশে অবস্থিত পাহাড় থেকে নেমে গত শনিবার রাতে নাফ নদীর তীর বেয়ে প্যারাবনের ভেতর দিয়ে সুদুর শাহপরীর দ্বীপের দিকে চলে যায়। ওখানে গিয়েই বিপদে পড়ে যায় হাতি দুটি। স্হানীয় লোকজনের ধাওয়া খেয়ে হাতি দুটি শাহপরীর দ্বীপের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে ঘোলারচর নামক জায়গায় চলে যায়। হাতি দুটি জোয়ারের পানিতে সাতার কাটছে আবার ভাটার সময় চরে চলে আসছে। গত দুদিন ধরে এভাবেই হাতি দুটির জোয়ার ভাটার দোলাচলে আসা যাওয়া করতে গিয়ে বিপন্ন হওয়ার অবস্থা।
গত দুদিন বন বিভাগ কোস্ট গার্ড বিজিবি চেষ্টা করেও হাতি দুটিকে ভাগে আনতে পারেনি। আজ সোমবার সন্ধ্যার দিকে হাতি দুটি নিজ থেকে বেরি বাঁধ পেরিয়ে গ্রামের দিকে আসতে চাইলে গ্রামবাসীরা ভয়ে আগুন জালিয়ে হাতি দুটিকে আবারও সাগরের দিকে তাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে হাতি দুটি নাফ নদীর মোহনায় ঘোলারচরের জোয়ারের পানিতে দোল খাচ্ছে। এখন পুর্ণিমার জোয়ারের পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। এ অবস্থায় রাতের বেলায় জোয়ারের ঢেউয়ে হাতি দুটির অবস্থা আশংকাজনক পর্যায়ে পড়তে পারে। হাতি হচ্ছে বন্য প্রাণী। সাগরের জোয়ার ভাটায় তারা কোন মতেই অভ্যস্ত নয়। এমনিতেই এখন ঝড়ের মৌসুম বর্ষা কাল। ঝড়বাদলের এই সময় নাফ দরিয়ার ঐ মোহনায় হাতি দুটির জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।
হাতি দুটির এ অবস্থার জন্য বন বিভাগ দায় এড়াতে পারেনা। হাতি দুটিকে তাদের আবাসস্থল পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়তো এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু বন বিভাগ হাতি দুটি উদ্ধারে দায়সারা গোছের কাজ করছে বলে জানা গেছে। হাতি দুটির সার্বক্ষণিক মুভমেন্ট পর্যবেক্ষন করছে না বন বিভাগ। কক্সবাজারের দক্ষিণ বন বিভাগ উপকূলীয় বন বিভাগের উপর দায় চাপাচ্ছে। আবার উপকূলীয় বন কর্মকর্তাদের এ ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা উল্টো সাংবাদিকদের নানা কথা বলে এড়িয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া হাতি দুটি উদ্ধার নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনও দায় এড়াতে পারেনা। অপর দিকে দেশের জীববৈচিত্র্য বা বিপন্ন হাতি নিয়ে যারা মাতামাতি করে সেই পরিবেশবাদী সংগঠন গুলোকেও সরব হতে দেখা যাচ্ছে না।
হাতি দুটি কক্সবাজারের টেকনাফের গহীন অরণ্য থেকেই বের হয়েছিল। কোনমতেই মিয়ানমার থেকে নাফ নদী সাতার কেটে এই পারে আসেনি হাতি দুটি। আমি বিপন্ন এই হাতি দুটি নিয়ে আশংকা করেছি, না জানি জোয়ারের ঢেউয়ের শ্রোতে গভীর সাগরে ভেসে যায় হাতি দুটো।
লেখক, একরাম চৌধুরী টিপু
কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি এনটিভির
Leave a Reply