টেকনাফ ৭১ ডেস্ক,
মোহাম্মদ ইব্রাহিম মোস্তফা, উখিয়া
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস’র সহযোগিতায় ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে ছাগল পালন শুরু করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আয়েশা বেগম (৩৪)। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ার একজন গৃহিণী। অভাবের সংসারর তার। স্বামী ও তিন কন্যা সন্তান নিয়ে কোনমতে সংসার চলতো। অনাহারে অর্ধহারেও গেছে অনেক সময়। কিন্তু বর্তমানে স্বল্প পুঁজি সহায়তা পেয়ে আজ অনেকটা স্বাবলম্বী। তিনি নিজের ইচ্ছেশক্তির মাধ্যমে আজ একজন সফল উদ্যোক্তার পথে।
জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা (আইওএম) এর অর্থায়নে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস’র সহযোগিতায় ইকরা প্রকল্পের অধীনে ৩৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা পেয়ে আয়েশা মাত্র চারটি দেশী জাতের ব্লাকবেঙ্গল ছাগল ক্রয় করেন। ওই চারটি ছাগল লালন-পালন করে বর্তমানে তার ছাগলের সংখ্যা ১৬টি। বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন ছাগলের খামার। সঠিক পরিকল্পনা আর ইচ্ছাশক্তি থাকলেই জীবনের সফলতা সম্ভব, তারই উদাহরণ সৃষ্টি করলেন আয়েশা বেগম।
জানা যায়, আয়েশা বেগম উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ার ওসমান গণির স্ত্রী। তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি প্রকল্পের আওতায় পালংখালী ইউনিয়নের কবুতর স্বনির্ভর দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
আয়েশা বেগমের জীবনের গল্প থেকে জানা যায়, পিতা-মাতার ইচ্ছা ছিল মেয়েকে পড়া-লেখা শিখিয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করাবে। কিন্তু তেমন লেখাপড়া করেনি আয়েশা বেগম। ফলে নিন্ম মধ্যবিত্ত ঘরে জন্ম নেয়া আয়েশা বেগমকে কিশোরী বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় মা-বাবা। তার বয়স তখন ১৭। স্বামী ওসমান গণি একটি ছোট দোকান দিয়ে কোন মতে সংসার চালাতো। মহামারী কোভিটের কারণে ধীরেধীরে সেই দোকানে বেচাঁ-বিক্রিও কমে আসতে শুরু করে। যা বিক্রি হয় তা দিয়ে সংসারের ৫ জনের অন্ন জোগাতে কষ্ট হয়ে যেত। একসময় সেই দোকানটিও ছেড়ে দেয়। এমন সময় তাদের আশার আলো হয়ে আসে ইউনাইটেড পারপাস।
আয়েশাসহ আরো অনেককে কর্মদক্ষতা, ব্যবসা পরিকল্পনা ও বুককিপিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষে নগদ অর্থ সহয়তা করে নিজেদের সাবলম্বী করে গড়ে তুলার জন্য। ২০২০ সালে ইউনাইটেড পারপাস আয়েশা বেগমকে ৩৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা প্রদান করে। তিনি ওই টাকা দিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এতে তিনি সফলও হয়েছেন। তিনি স্থানীয় বাদশা মিয়ার কাছথেকে দেশী জাতের এক বছর বয়সী চারটি ব্লাকবেঙ্গল জাতের ছাগল ক্রয় করে লালনপালন শুরু করেন। এরপর সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ছাগলগুলো যত্ন সহকারে লালনপালন করে বড় করেন। ছাগলগুলো ৬ মাস পরই একই সঙ্গে ২টি করে বাচ্চা দেয়। এ থেকেই তার ইচ্ছাশক্তি আরও বেড়ে যায়। সেই চারটি ছাগল থেকে আজ আয়েশা ১৬টি ছাগলের মালিক। তার খামারের ছাগল বিক্রি করে প্রায় লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশাবাদী আয়েশা।
সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি নিজে বেশিদুর পড়ালেখা না করলেও মেয়েদের ঠিকই শিক্ষিত করে গড়ে তুলছেন। বড় মেয়ে পালংখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। মেজ মেয়েও ছোট মেয়েও পড়াশোনা করছে।
সফল নারী উদ্যোক্তা আয়েশা বেগম বলেন, ছাগল পালন সম্পর্কে চারটি বাচ্চা জন্মের ৬ মাসের মধ্যে বাচ্চা প্রসব করে। ভালো জাতের ছাগল হলে প্রজনন নেয়ার পর প্রতিটি ছাগল একই সঙ্গে ২ থেকে ৪টি করে বাচ্চা দেয়। সুন্দরভাবে লালন-পালন করলে এক বছর পর প্রতিটি ছাগল ভালো দামে বিক্রি করা যায়। এক বছরের একটি পাঠা ছাগল কমপক্ষে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। এই ছাগল পালন করতে খাদ্য, ঘাস, ভূষি, চিকিৎসাসহ খরচ হয় মাত্র ২ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আই.ও.ম এর অর্থায়নে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনাইটেড পারপাস সহযোগিতায় উখিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশীয় পদ্ধতিতে ছাগল পালন করে আসছি। এটি খুবই লাভজনক ব্যবসা। যা থেকে সহজে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। যদি আরও মোটা অংকের পুঁজি পায় তাহলে খামারটি আরো প্রসারিত করতে পারলে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে।”
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “আমার ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে বাসিন্দা আয়েশা বেগম আইওএম অর্থায়নে ইউনাইটেড পারপাসের সহযোগিতা ৩৫ হাজার টাকা পেয়ে কপাল খুলে গেছে। এখন তার সংসারে আর অভাব নেই। শুধুমাত্র ছাগল পালন করেই এখন অনেক টাকার মালিক তিনি। মেয়েদের পড়াশোনা খরচ জোগাতে আর কোন চিন্তা করতে হচ্ছে না। পড়ালেখার পাশাপাশি মেয়েরা খামারের ছাগলগুলো দেখাশোনা করে। এখন তিনি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন। নিজের ইচ্ছেশক্তিতে আজ তিনি স্বাবলম্বী। আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ইউনাইটেড পারপাসকে ধন্যবাদ জানায় এমন গরিব মানুষকে খুঁজে নগদ অর্থ সহায়তা করার জন্য।”
উখিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, “ইউনাইটেড পারপাস’র মাধ্যমে আমাদের টিম আয়েশা বেগমের খামার পরিদর্শন করে সার্বিক পরামর্শ প্রদান করে। এছাড়া মানসম্মতভাবে ছাগল পালনের জন্য একটি শেডঘরও তৈরি করেছে আয়েশা বেগম। কেউ যদি আধুনিক পদ্ধতি ও উন্নত জাতের ছাগলের খামার করে, সেটি অবশ্যই অধিক লাভজনক হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আয়েশা বেগম এখনও প্রায় আমাদের কার্যালয়ে এসে বিভিন্ন ছাগলের ব্যাপারে পরামর্শ নেন। তার মতো যদি কেউ আমাদের কাছে যে কোনো প্রাণির ব্যাপারে পরামর্শ নিতে আসেন আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।”
Leave a Reply