• ফারুকুর রাহমান, টেকনাফ।
কক্সবাজার টেকনাফের কচুবনিয়া এমপি বদির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলী আকবর সাজ্জাদ প্রায়ই চতুর্থ শ্রেণির তিন ছাত্রীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতেন। এতে ছাত্রীরা লজ্জাবোধ করে কান্নায় ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একাধিকবার এ যৌন হয়রানির পুনরাবৃত্তি ঘটনা প্রধান শিক্ষক।
গত ২৫ নভেম্বর ‘টেকনাফে স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগের এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর ‘টেকনাফে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়’। কক্সবাজার জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গিয়ে গোপন ও প্রকাশ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অভিযোগকারী তিন ছাত্রী ও অভিভাবকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
কক্সবাজার জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদ বলেন,ভুক্তভোগী তিন ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের লিখিত বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই-বাছাই করে ওই তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিও) কাছে গত ডিসেম্বর মাসে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মুহাম্মদ শাহীন মিয়া বলেন,মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা থাকার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারিতে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করতে সুপারিশ করা হয়। মামলা রুজু হলে কেন তাকে কেন তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা রুজু হলে নিয়মানুযায়ী অবশ্যই বরখাস্ত করতে হয়। বিষয়টি আমার জানা ছিল।এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন,সচরাচর কোনও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ উঠলে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত করতে হয়। কিন্তু এ অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর ও তাকে আজও কেন? সাময়িক বরখাস্ত করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করায় মানী দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী তাকে সরাসরি বরখাস্ত করতে হয়।কিন্তু আমরা দেখে এসেছি এক্ষেত্রে একটি উদাসীনতা সবসময় কাজ করে এসব প্রতিষ্ঠানে। যার ফলে এমন অপরাধে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত হচ্ছেন অপরাধীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর এসব ঘটনা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। কেন তাকে বরখাস্ত করা হয়নি জেলা শিক্ষা অফিসার জানবে।
শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, “স্যার আমাদের বলেন, ‘তোমরা স্কুলে আসার সময় দুই ঘণ্টা আগে আসবা।’ খালি ক্লাসরুমে প্রবেশ করায় দরজা বন্ধ করে আমাদের সবসময় যৌন হয়রানির করত। স্যার আমাদের বলত যে, ‘তোমাদের পরীক্ষায় ভালো নম্বর দিয়ে পাস করিয়ে দিব এবং তোমরা প্রতিজ্ঞা করবা, তোমাদের সঙ্গে যা ঘটছে জীবনেও তা কারও কাছে কিছু বলা যাবে না।’ পরে এগুলো বলে আমাদের মাজায় ও স্পর্শকাতর স্থানে হাতে হাত দেয়।
ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘ আমার মেয়ে স্কুলে যায় না। মেয়ের মার থেকে জানতে চাইলাম কেন হঠাৎ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বিষয়টি মাও জানে না। ১০ বছরের ছোট্ট মেয়ে। তাই ভয়ে আমাদের জানায়নি, কিন্তু ওদের বান্ধবীরা একদিন মেয়ের মাকে বিষয়টি অবগত করল যে, আপনার মেয়েকে হেড স্যার যৌন হয়রানির করে আসছে তাই উনি স্কুলে যাচ্ছে না।‘আমি বিষয়টি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের জানাই। তারা আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে বলেন।’পরে আমি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করি।
Leave a Reply