ঈদগাঁও প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তঃ জেলা মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে দ্বীর্ঘ বছর রাজনৈতিক ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের পরিচালনায় চলছে গরু-মহিষের বিশাল গরু বাজার। মহাসড়কের উপর গরু-মহিষের বাজার হওয়ায় প্রতিনিয়ত দ্বীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। দ্বীর্ঘ যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদ মৌসুমে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা সাধারণ বাসযাত্রীদের। দুর্ভোগের শেষ নাই স্থানীয় পথচারি ও শিক্ষার্থীদেরও।
ঈদগাঁও উপজেলায় অবস্থিত দক্ষিণ চট্টলার সর্ববৃহত্তম ঈদগাঁও বাজারে দোকানপাট, শপিংমল, রেষ্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্টান ও ব্যাংক-বীমাসহ প্রায় ৮ হাজারের ও অধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যদিকে বাস স্টেশন ও পার্শবর্তী এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান। অদূরে ঈদগাঁও থানা। এসবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বৃহৎ আবাসিক এলাকা ।
অনুসন্ধানে জানা যায়- মহাসড়কের উপর কুরবানির হাট বসানো সরকারি বিধি নিষেধ থাকার পরেও উপজেলা জামায়াতের রুকন নুরুল হুদা, জামায়াত কর্মী চৌফলদন্ডী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর আলম, বিএনপি নেতা আবু তাহের মুন্না, শ্রমিকদলের সভাপতি মোক্তার আহম্মদ, নেতৃত্বধীন রাজনৈতিক ব্যবসায়ীক সিন্ডিকেট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঈদগাঁও গরু-মহিষের হাট পরিচালনা করছেন। তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা যায়: ঈদগাঁও গরু বাজারের হালসনের ইজারাদার খরুলিয়ার আব্দু রহিম হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে রহিমের কাছ থেকে কমিশনে ঈদগাঁও বাজারটি সাব ইজারাদার নেই উপজেলা জামায়াতের ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। অথচ ইজারা চুক্তিপত্রে সাব ইজারা দেওয়া যাবেনা বলে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমনকি মহাসড়কের উপরে যানজট সৃষ্টি করে কুরবানি পশুর হাট বসানোরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার পরেও অবাধে গরু-মহিষের হাট বসানো জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানো।
হাট-বাজার আইন ২০২৩ এবং মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী জনতার বাজার পশুরহাট পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সর্বশেষ, গত ২৪ মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সারাদেশে মহাসড়কের পাশে পশুরহাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কেউ আইন না মেনে উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক ১ (এক) বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
ঈদগাহ্ রশিদ আহমদ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, গরু বাজারের উপর দিয়ে কলেজে যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। আমরা যারা হেঁটে যাতায়াত করছি তারা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন গরু বাজার যেন আমাদের যাতায়াতের রাস্তা তথা মহাসড়কের উপর থেকে সরানো হয়।
কোরবানি পশুর হাটের পার্শ্ববর্তী মেহেরঘোনা এলাকার নুরুল আলম ও জসিম উদ্দিন জানান, মহাসড়ক হয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গরু বাজারটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
গরু ক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, গতবাজারে ঈদগাঁও গরু বাজার থেকে একটি গরু কিনে ক্রেতার পক্ষে হাসিলের টাকার পরিমান শুনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। পরে তর্কাতর্কিতে আমি ১০০০ টাকা আর যিনি বিক্রি করেছেন তিনি ১৫০০ টাকা হাসিল দিয়ে গরু নিয়ে বাড়ি চলে যায়। অন্যান্য গরু বাজারের তুলনায় এই বাজারের হাসিলের টাকার পরিমান অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গরু বিক্রেতা নাসির উদ্দীন জানান, ঈদগাঁও বাজার উপজেলার বৃহত্তর বাজার বলে হাট-বাজারের দিন গরু নিয়ে আসি কিন্তু মহাসড়কের উপরে গরু বাজার বসায় গাড়ি হর্ণে গরু লাফালাফি করে ফলে নানান সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এত্ত বড় বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার কোনো ধরণের হাসিলের বিলবোর্ড টাঙানো নেই ফলে যে যার মতো হাসিল আদায় করছে যেটা একপ্রকার চাঁদাবাজির মতো।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা আগে থেকে অবগত আছি যে মহাসড়কের দুই পাশে পশুর হাট বসানো আইনগত অপরাধ, যেহেতু পশুর হাটের জন্য ঈদগাঁওতে দীর্ঘযানজট লেগে থাকে তাই আমরা উপজেলা প্রশাসনকে আগে থেকে জানিয়ে রেখেছি,যদি কোনভাবে পশুর হাট রাস্তায় উঠানো হয় আমরা প্রশাসন মিলে পদক্ষেপ নিবো।
এবিষয়ে রামু তুলাতলি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনসার্জ নাছির উদ্দিন বলেন, হাইওয়ে সড়কের উপর কোরবানি পশুর হাট বসলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সড়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ১২ মে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মহাসড়কে যেন কোরবানির পশুর হাট না বসে, এবং নির্ধারিত স্থানে যেন পশুর হাটগুলো বসানো হয় অন্যতায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে বহু জেলা ও উপজেলায় তার নির্দেশনা না মেনে অবাধে বসানো হচ্ছে কোরবানি পশুর হাট।
এই বিষয়ে সওজ কক্সবাজার অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ জানান- সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল করিম খানের নির্দেশে আমরা জেলা প্রশাসককে পুর্বেও বলেছিলাম এবং আমরা পশুর হাট গুলোতে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করবো।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে এবিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, চট্রগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের বিশ ফিটের ভিতরে যদি কোন গরু মহিষ আসে, তাহলে প্রশাসন কতৃক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালা্হউদ্দিনের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জানান, আগামীকাল সকাল দশটায় কল দেয়ার কথা বলে লাইন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে বাজারের মূল ইজারাদার আব্দু রহিমকে বেশ কয়েকবার মুটোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
কুরবানি পশুর হাটের পার্শ্ববর্তী মেহেরঘোনা এলাকার নুরুল আলম ও জসিম উদ্দিন জানান- মহাসড়ক হয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গরু বাজারটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
Leave a Reply