নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার টেকনাফের আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তার নাম এএসআই মোশাররফ হোসেন। আওয়ামী আমলে টেকনাফে পুলিশিংয়ে বাহিরে গিয়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন তিনি। এএসআই মোশাররফ ছিল টেকনাফ থানায় একজন আতংকিত পুলিশ অফিসার। যার ভয়ে কাঁপতো পুরো টেকনাফ।
২৪ এর গণঅভ্যূত্থানের আন্দোলনের সময় আওয়ামী ক্যাডারের মতো ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। এমনকি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর লাঠিপেটা করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। আন্দোলনকারী ছাত্রদের আটক করে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে মোশাররফের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে বিএনপি-জামায়াতের লোকদের যেখানে দেখতেন,পেটাতেন। এমন গুরুতর অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রতাশিত হলে তাকে কুতুবদিয়া থানায় বদলির আদেশ দেয়া হয় । বদলির আদেশের প্রায় একমাস পেরিয়ে গেলেও টেকনাফ থানায় বহাল থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। তাকে কুতুবদিয়া থানায় বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
অভিযোগ উঠেছে , টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের আশির্বাদে সে এখনো টেকনাফ থানায় বহাল রয়েছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন- আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ২৪ এর আন্দোলনকারী ছাত্রদের পেটানো এবং আটক করে টাকা আদায় করার মতো গুরুতর অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার এতদিন কীভাবে টেকনাফ থানায় বহাল থাকে? তাকে দ্রুত চাকরিচ্যুত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানান টেকনাফের স্থানীয় ভুক্তভোগী ছাত্র-জনতা।
মোশাররফের হাতে নির্যাতিত বিএনপির এক নেতা অভিযোগ করে বলেন,মোশাররফ একজন আওয়ামী লীগের ক্যাডার, সে কোনো পুলিশ অফিসার নয়। ৫ আগস্টের পরেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের ফোন করে অভিযানের খবর জানিয়ে দেন। যা কোনো পুলিশ অফিসার করতে পারেন না। যার কারণে ভালো অফিসারদের অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে। কোন অদৃশ্য শক্তির বদৌলতে মোশাররফ টেকনাফ থানায় এখনো বহাল রয়েছে-এমনও প্রশ্ন বিএনপির ওই নেতার। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পূনর্বহাল করতেই টেকনাফে কাজ করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে মোশাররফের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতেই টেকনাফে বহাল রয়েছে মোশাররফ। দ্রুত তাকে টেকনাফ থানা থেকে সরানো না হলে, রাজপথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এএসআই মোশাররফ কে দ্রুত চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান বিএনপির ভুক্তভোগী ওই নেতা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের কাজের কিছু সিস্টেম আছে,তবে এই সপ্তাহের মধ্যে চলে যাবে।
এদিকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এএসআই মোশাররফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল টেকনাফের সাধারণ মানুষ। তার ভয়ে বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী বাড়িছাড়া হয়ে পথেঘাটে নির্ঘুম রাত কাটান।
টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষার্থী জিয়াউল ইলহাম জানান, ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে তাকে আটক করে নিয়ে যান মোশাররফ। সারা রাত আটকে রেখে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফজরের আগে আগে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে হুমকি দেন আবার আন্দোলনে গেলে তার মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করবেন । এখন তিনি ভিন্ন রূপ ধারণ করে টেকনাফ থানায় বহাল ।
এভাবে অনেক আন্দোলনকারী ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতেন বলে অভিযোগ মোশাররফের বিরুদ্ধে। ওসামা নামে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, ‘প্রতিনিয়ত মোশাররফ দোকানে এসে হুমকি দিতেন। বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে দোকানে বসার সুযোগ দিলে দোকান বন্ধ করে দেবেন।
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল হুদা ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে লিখেন, কন্ট্রাকে মানুষের দোকান দখলসহ বাজারের এক চায়ের দোকানে ওপেন ঘুষ বাণিজ্যের হাট বসাতেন এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন এএসআই মোশাররফ। এমনকি ৩ আগস্টেও তিনি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার চেষ্টা চালান। তিনি কীভাবে এখনো বহাল থাকেন, এমন প্রশ্ন তোলেন বিএনপির ওই নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘প্রতিবেশী কিছু দুর্বৃত্তের হাতে মারধরের শিকার হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছিলাম গত ২১ সেপ্টেম্বর। সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পান এএসআই মোশাররফ। তিনি কিছু খরচ নিয়েছেন। এক মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। এএসআই মোশাররফ কে দ্রুত সরানো না হলে টেকনাফে তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে উঠতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সচেতন মহল।###
Leave a Reply